(দুটি অংশে লিবারেশন-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং নভেম্বর ১৯৯৩ সংখ্যায় প্রকাশিত)
আমাদের কৃষিবিপ্লব তিনটি বুনিয়াদী প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে রয়েছে :
(১) এটি গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অঙ্গ এবং এই বিপ্লবের মর্মবস্তু হল সামন্ত অবশেষের কবল থেকে গ্রামাঞ্চলকে মুক্ত করা।
(২) আর্থ-সামাজিক দিক থেকে এই কৃষিবিপ্লব হল বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিপ্লব পুঁজিবাদ ও পুঁজিবাদী শ্রেণীদ্বন্দ্বের বিকাশকে দুর্বল না করে তাকে বরং শক্তিশালী করবে।
(৩) কমিউনিস্টদের অবশ্যই অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এই বিপ্লবকে সমর্থন করতে হবে এবং নেতৃত্ব দিতে হবে। আর নির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতির মধ্যে আটকে না পড়ে সামন্ত অবশেষের আমূল দূরীকরণের লক্ষ্যে, অর্থাৎ অন্য কথায় সর্বোচ্চ বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক সংস্কার অর্জনের লক্ষ্যে তাদের আশু দাবিগুলি সূত্রবদ্ধ করতে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির কর্মসূচির দিশার প্রশ্নে লেনিন প্রায়শই কাউটস্কির একটি বক্তব্যকে সঠিক বলে উদ্ধৃত করেছেন :
“শুধু বর্তমান মুহূর্তের জন্যই কমিউনিস্ট কর্মসূচি রচিত হয় না, বর্তমান সমাজের সমস্ত সম্ভাবনাকেই তার যথাসম্ভব মাথায় রেখে চলা উচিত। শুধুমাত্র ব্যবহারিক কাজকর্মই নয়, প্রচারের কাজেরও দিকনির্দেশ করবে কর্মসূচি। কোনও অলীক স্বর্গলোকের কল্পনা না করে, আমরা যে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারি তা কোনও বিমূর্ত কর্মসূচির চেয়ে যত বেশি জীবন্তভাবে কিছু নির্দিষ্ট দাবি সূত্রায়নের মাধ্যমে এই কর্মসূচিতে তুলে ধরা যায় ততই ভালো। তাহলেই আমরা কোনদিকে এগোচ্ছি তা জনগণের কাছে স্পষ্টতর হয়ে উঠবে, এমনকি তাঁদের কাছেও স্পষ্ট হবে যাঁরা আমাদের তাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিত ঠিক ধরতে পারেন না। বর্তমান সমাজ বা বর্তমান রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা কী আশা করি তা নয়, কর্মসূচি তুলে ধরবে তাদের কাছ থেকে আমরা কী দাবি করি সেটাই।”
কৃষিবিপ্লবের প্রস্তাবনা এবং কমিউনিস্ট কর্মসূচির দিশার প্রশ্নগুলির মীমাংসার পর উন্নত দেশগুলির বিপরীতে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলির, অর্থাৎ যেখানে কৃষিক্ষেত্রে সামন্ত অবশেষগুলি এখনও অত্যন্ত শক্তিশালী সেইসব দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কৃষি কর্মসূচির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য উপলব্ধি করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
আর একবার লেনিনকে উদ্ধৃত করা যাক : “পশ্চিমে কৃষি কর্মসূচিগুলি রচিত হয় বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট আন্দোলনে আধা-কৃষক, আধা-শ্রমিকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে; আর আমাদের মতো দেশে ঐ কর্মসূচির লক্ষ্য হল ভূমিদাস ব্যবস্থার অবশেষের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কৃষক জনগণকে সমাবেশিত করা। সুতরাং পশ্চিমে কৃষিতে পুঁজিবাদ যত বিকাশলাভ করবে কৃষি কর্মসূচির গুরুত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে। আর কৃষিতে পুঁজিবাদের বিকাশের সাথে সাথে আমাদের কৃষি কর্মসূচির, অন্তত তার অধিকাংশ দাবির, গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকবে, কারণ যে ভূমিদাস প্রথার অবশেষের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচির বর্শামুখ নিবদ্ধ তা কালের গতিতে স্বাভাবিকভাবেই তথা সরকারি নীতির ফলশ্রুতিতে অবলুপ্তির পথে চলেছে।”
এই পরিস্থিতি কমিউনিস্টদের সামনে দুটি বিকল্প হাজির করে, যার দরুণ তারা বিপ্লবী এবং সুবিধাবাদী এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সুবিধাবাদী অংশ স্বতস্ফূর্ততার ওকালতি করে এবং দ্রুততর গতিতে অগ্রসর হওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দেওয়ার অজুহাতে এমনকি তার লেজুড়ে পরিণত হয়। কেউ কেউ এমনকি কৃষিতে পুঁজিবাদের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্যোগী কৃষিজীবীতে পরিণত হওয়ার কথা বলেন, এইভাবে কমিউনিস্ট শিবির ত্যাগ করে তাঁরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির পৃষ্ঠপোষকতায় ও আমলাতন্ত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমাজসংস্কারের অরাজনৈতিক পথে পা বাড়ান।
অপরদিকে বিপ্লবী অংশ সামন্ত অবশেষের দ্রুত ও আমূল দূরীকরণের লক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিজের আয়ত্তে আনার তথা কৃষক জনগণকে সমাবেশিত করার জন্য এক বিপ্লবী কৃষি কর্মসূচির পক্ষে দাঁড়ায়।
এখানে একথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে গ্রামাঞ্চলে সামন্ত সম্পর্কের অবশেষগুলি প্রায়শই পুঁজিবাদী সম্পর্কগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কৃষকরা, এমনকি ছোটো কৃষকরাও, বিভিন্ন মাত্রায় বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। আর এক্ষেত্রে ঋণ, ভর্তুকি, কৃষি উৎপাদন ক্রয় ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে রাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয়। এই কারণেই রাজনৈতিক রদবদলের সময় প্রায়শই দেখা যায় যে ঋণ মকুব ইত্যাদি কিছু কিছু ছাড় ঘোষণা করে সরকার কৃষকদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে, তাঁদের বিপ্লবী মানসিকতাকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি সামান্য বা নগণ্য ছাড় এবং সেগুলিও পেয়ে থাকেন সামান্য কয়েকজন ছোটো জমির মালিক। কৃষকদের মধ্যকার রক্ষণশীল অংশের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া যতই গভীর হবে, কৃষকদের বিপ্লবী অংশকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমাদের দাবিগুলিও হয়ে উঠবে ততই বিপ্লবী। সামান্য যা কিছু ছাড় আদায় করা যাবে তা অবশ্য আমরা ছেড়ে দেব না।
কৃষক শ্রেণীর কেন্দ্রীয় দাবি সম্পর্কে বলতে গেলে, জমির সার্বিক পুনর্বণ্টনের কথাই সবার আগে আসে। একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে কৃষক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের, অর্থাৎ যাঁরা শ্রমিকদের বদলে কৃষকদেরই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারক ও বাহক হিসাবে গণ্য করেন তাঁদের কাছেও এই দাবি একটি সমাজতান্ত্রিক দাবি। তাঁদের ধারণায় জমির সার্বিক পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষক উৎপাদনকে সাধারণীকরণ করা যায় এবং স্থায়ী রূপ দেওয়া যায়। কৃষক সমাজতন্ত্রের এই প্রতিক্রিয়াশীল অলীক ধারণাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা মনে করি সার্বিক পুনর্বণ্টন পুঁজিবাদ, কৃষকদের মধ্যে বিভাজন ও শ্রেণীদ্বন্দ্বগুলিকেই সাহায্য করবে। তা সত্ত্বেও এই দাবি আমরা সমর্থন করি কারণ এর মধ্যে এক কৃষক বিদ্রোহের মাধ্যমে সমস্ত সামন্ত অবশেষ নির্মূল করার বিপ্লবী উপাদান নিহিত রয়েছে।
প্রথমেই এটা স্পষ্ট করে নেওয়া দরকার যে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবে জমির জাতীয়করণের অর্থ বস্তুত রাষ্ট্রের হাতে খাজনার হস্তান্তর। এর সঙ্গে ‘চাষ করে যে জমি তার’ – এর সাধারণ গণতান্ত্রিক শ্লোগানের কোনো বিরোধ নেই। জমির পুনর্বণ্টন ও জাতীয়করণ – উভয় ক্ষেত্রেই যে চাষ করে তার কাছেই জমি হস্তান্তরিত হয়। মূল প্রশ্ন মালিকানার রূপের সঙ্গে জড়িত। প্রথম ক্ষেত্রে মালিকানা ন্যস্ত হয় কৃষকদের হাতে, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হাতেই জমির মালিকানা থাকে। রাষ্ট্র নির্দিষ্ট খাজনার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কৃষকদের জমি লিজ দেয়। জমির জাতীয়করণ হলে কৃষক ও রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্ত মধ্যস্বত্বভোগীর বিলোপ ঘটে।
জমির জাতীয়করণকে প্রায়শই কৃষি উৎপাদনের সমাজতান্ত্রিকীকরণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। সমাজতান্ত্রিকীকরণে শুধুমাত্র জমিই নয়, উৎপাদনের সমস্ত উপকরণেরই জাতীয়করণ করা হয় এবং বড় বড় রাষ্ট্রীয় খামারে যৌথভাবে চাষবাস সংগঠিত হয়। স্পষ্টতই আমরা বলছি জমির বুর্জোয়া জাতীয়করণের কথা, যা সমস্ত ধরনের সামন্ত অবশেষকে নির্মূল করবে, চাষবাসকে সবচেয়ে যুক্তিসম্মতভাবে সংগঠিত করবে এবং এইভাবে পুঁজিবাদের পরিপূর্ণ বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।
পুঁজিবাদ অনিবার্যভাবেই পুরোনো সামন্ত ভূ-মালিকানার পরিবর্তন ঘটায়। তবে বিভিন্ন দেশে তা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ঘটে থাকে।
জার্মানিতে ভূ-মালিকানার মধ্যযুগীয় রূপের পরিবর্তন ঘটে সংস্কারবাদী পথে। সামন্ত তালুকগুলি ক্রমশ যুঙ্কার (Junker) সম্পত্তিতে পরিবর্তিত হয়। ইংল্যান্ডে এই রূপান্তর ঘটে হিংসাত্মক বিপ্লবী পথে। কিন্তু এই হিংসা ব্যবহৃত হয় ভূস্বামীদের স্বার্থে – কৃষক জনগণকে করের বোঝায় নিঃস্ব করে তাঁদের বাস্তুচ্যুত করা হয়।
আমেরিকার দক্ষিণী রাজ্যগুলির দাস খামারগুলিতে এই রূপান্তর সহিংস পথেই ঘটে। এক্ষেত্রে দাসমালিক জমিদারদের বিরুদ্ধেই হিংসা পরিচালিত হয়। তাদের জমিদারী তালুকগুলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বিরাট সামন্ত জমিদারীর জায়গায় গড়ে ওঠে ছোটো ছোটো পুঁজিবাদী খামার।
কেবলমাত্র পুঁজিবাদের বিকাশের উচ্চ পর্যায়েই জাতীয়করণ সম্ভব – এই ধারণাকে লেনিন বারংবার খণ্ডন করেছেন।
লেনিন বলেছেন, “তত্ত্বগত দিক থেকে জাতীয়করণ হল কৃষিতে পুঁজিবাদের ‘আদর্শ’ বিশুদ্ধ বিকাশ। জাতীয়করণকে বাস্তব করে তোলার জন্য পুঁজিবাদী সমাজে শর্তাবলী ও শক্তিসমূহের সম্পর্কের যে সমন্বয় প্রয়োজন সেই পরিস্থিতি ইতিহাসে বারবার আসে কিনা তা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। তবে জাতীয়করণ পুঁজিবাদের দ্রুত বিকাশের কেবল প্রতিশ্রুতিই নয়, তার শর্তও বটে। কৃষিতে পুঁজিবাদের বিকাশের অত্যন্ত উচ্চস্তরেই কেবল জাতীয়করণ সম্ভব – এমন মনে করার একমাত্র অর্থ হল বুর্জোয়া প্রগতির উপায় হিসাবে জাতীয়করণকে নাকচ করা; কারণ কৃষিতে পুঁজিবাদের উচ্চতর বিকাশ সর্বত্রই ‘কৃষি উৎপাদনের সামাজিকীকরণ’ অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে আশু কর্মসূচি হিসাবে হাজির করেছে (এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে অন্যান্য দেশেও যথাসময়ে তা করবে)। সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যে সংগ্রাম যখন তীব্রতর হয়ে ওঠে, সে রকম পরিস্থিতিতে কোনো বুর্জোয়া পদক্ষেপকেই বুর্জোয়া প্রগতির পদক্ষেপ বলে ভাবা যায় না। এ ধরনের পদক্ষেপের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে সেই সমস্ত ‘নবীন’ পুঁজিবাদী দেশে যার শক্তির বিকাশ বিশেষ ঘটেনি, যার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহ এখনও পূর্ণ বিকশিত হয়নি এবং সরাসরি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠার মতো শক্তিশালী এক সর্বহারা যেখানে গড়ে ওঠেনি। আর শুধুমাত্র ১৮৪৮-এর জার্মানিতে বুর্জোয়া বিপ্লবের যুগেই নয়, ১৮৪৬-এর আমেরিকার ক্ষেত্রেও মার্কস জমির জাতীয়করণের সম্ভাবনা মেনে নিয়েছেন, এমনকি কখনও কখনও সরাসরি তার ওকালতি করেছেন। অথচ মার্কস নিজেই অত্যন্ত সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে সেই সময়ে আমেরিকায় শিল্প বিকাশ সবেমাত্র শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন পুঁজিবাদী দেশের অভিজ্ঞতা থেকে জমির জাতীকরণের কোনো বিশুদ্ধ রূপের দৃষ্টান্ত আমরা পাই না। নবীন পুঁজিবাদী গণতন্ত্র নিউজিল্যান্ডে এর অনুরূপ কিছু আমরা প্রত্যক্ষ করি, যেখানে কৃষিতে পুঁজিবাদের উন্নত বিকাশের কোনো চিহ্ন নেই। আমেরিকার সরকার যখন বাস্তুজমি আইন (Homestead Act) চালু করে এবং নামমাত্র খাজনায় ক্ষুদে কৃষকদের জমি বিতরণ করে তখন সেখানকার অবস্থাও ছিল অনেকটা একইরকম।” (লেনিন, সমাজগণতন্ত্রের কৃষি কর্মসূচি)
মার্কস কখনই কৃষিতে পুঁজিবাদের অনুন্নত পর্যায়কে জাতীয়করণের পথে বাধা মনে করেননি। তাঁর উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্বে মার্কস বলেছেন যে পুঁজিবাদী উৎপাদনে জমির মালিক নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়, রাষ্ট্রের হাতে জমি থাকলেই পুঁজিবাদী উৎপাদনের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণভাবে সিদ্ধ হয়।
তত্ত্বগতভাবে একজন চরমপন্থী বুর্জোয়া যদিও জমির ওপর ব্যক্তিমালিকানার অবসান কামনা করে, বাস্তবে কিন্তু সে জাতীয়করণকে ভয় পায়। মার্কস এর দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।
প্রথমত একজন চরমপন্থী বুর্জোয়া ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তির ওপর আঘাত হানতে সাহস পায় না সমস্ত ধরনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর সমাজতান্ত্রিক আঘাত, অর্থাৎ এক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ভয়ে।
দ্বিতীয়ত উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলিতে উৎপাদনের বুর্জোয়া ধরন ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তির সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলেছে, অর্থাৎ এই ব্যক্তিগত সম্পত্তি সামন্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি বুর্জোয়া চরিত্রসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। শ্রেণী হিসাবে বুর্জোয়ারা যেখানে ইতিমধ্যেই “নিজেদের জমিভিত্তিক করে তুলেছে”, “জমিতে আস্তানা গেড়েছে”, ভূসম্পত্তিকে নিজেদের অধীনস্থ করেছে, সেখানে জাতীয়করণের সপক্ষে বুর্জোয়াদের দ্বারা কোনো যথার্থ সামাজিক আন্দোলন সম্ভব নয়। কারণটি সহজবোধ্য, কোনো শ্রেণীই নিজের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে না।
রাশিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেনিন অবশ্য বলেছেন, “সমস্ত দিক থেকে রাশিয়ার বুর্জোয়া বিপ্লব বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশুদ্ধ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আমাদের অবশ্যই রাশিয়ার সর্বাধিক সামন্ত অবশেষের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শিল্পে তুলনামূলকভাবে বিকশিত পুঁজিবাদ ও গ্রামাঞ্চলের ভয়াবহ পশ্চাদবর্তিতার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে এবং বস্তুগত কারণেই বুর্জোয়া বিপ্লবকে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী করে তোলে ও কৃষির অত্যন্ত দ্রুত বিকাশের শর্ত সৃষ্টি করে। জমির জাতীয়করণই হল আমাদের কৃষিতে দ্রুত পুঁজিবাদী অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। রাশিয়াতে এক “চরমপন্থী বুর্জোয়াশ্রেণী” রয়েছে যারা এখনও নিজেদের “জমিভিত্তিক” করে তোলেনি, যাদের এই মুহূর্তে কোনো সর্বহারা “আঘাতের” ভয় নেই। এই চরমপন্থী বুর্জোয়ারা হল রাশিয়ার কৃষক।” (ঐ)
ভারতের পরিস্থিতি কি রাশিয়ার এই বর্ণনার অনুরূপ নয়?