শ্রমিকশ্রেণীর যে সব পার্টি এখন বিদ্যমান, যেমন ইংল্যান্ডে চার্টিস্টগণ ও আমেরিকায় কৃষি সংস্কারবাদীরা, তাদের সঙ্গে কমিউনিস্টদের সম্পর্ক দ্বিতীয় অধ্যায়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।

উপস্থিত লক্ষ্যসিদ্ধির জন্য, শ্রমিকশ্রেণীর সাময়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য কমিউনিস্টরা লড়াই করে থাকে, কিন্তু বর্তমান আন্দোলনের মধ্যে থেকে সেই আন্দোলনের ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করে, সে সম্পর্কে যত্নবান হয়। ফ্রান্সে রক্ষণশীল এবং রঽ৷ডিকাল বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে তারা সোশ্যাল ডেমোক্রাটদের সেই সময়ে সংসদে এই দলের প্রতিনিধিত্ব করতেন লেদ্রু-রলাঁ, সাহিত্য জগতে লুই ব্লাঁ এবং দৈনন্দিন সংবাদ জগতে রিফর্মে পত্রিকা। সমাজগণতন্ত্র এই নামটি দিয়ে এবং তার সঙ্গে তার উদ্ভাবকদের গণতন্ত্রী বা প্রজাতন্ত্রী দলের একাংশ বলে বোঝাত, যার মধ্যে সমাজতন্ত্রের কমবেশি রং লেগেছে। (১৮৮৮ সালের ইংরাজি সংস্করণে এঙ্গেলের টীকা)। সঙ্গে হাত মেলায়, কিন্তু মহান ফরাসি বিপ্লব থেকে ঐতিহ্য হিসাবে যে সব বাঁধা বুলি ও ভ্রান্তি চলে আসছে তার সমালোচনার অধিকারটুকু বর্জন না করে।

সুইজারল্যান্ডে সমর্থন করা হয় রঽ৷ডিকালদের, কিন্তু এ সত্য ভোলা হয় না যে এ দলটি পরস্পর বিরোধী উপাদানে গঠিত, এদের খানিকটা ফরাসি অর্থে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী আবার খানিকটা হল রঽ৷ডিকাল বুর্জোয়া।

পোল্যান্ডে তারা সেই দলটিকে সমর্থন করে যারা জাতীয় মুক্তির প্রাথমিক শর্ত হিসাবে কৃষি বিপ্লবের ওপর জোর দেয়, সেই দল যারা ১৮৪৬ সালের ক্রাকোভ বিদ্রোহে ইন্ধন জুগিয়েছিল।

জার্মানিতে বুর্জোয়ারা যখন বিপ্লবী অভিযান করে তখনই কমিউনিস্টরা তাদের সঙ্গে একত্রে লড়ে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র, সামন্ত জমিদারতন্ত্র এবং পেটি বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে।

কিন্তু বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের মধ্যে যে বৈর বিরোধ বর্তমান তার যথাসম্ভব স্পষ্ট স্বীকৃতিটা শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে সঞ্চার করার কাজ থেকে তারা মূহূর্তের জন্যও বিরত হয় না; এইজন্য যাতে, বুর্জোয়াশ্রেণী নিজ আধিপত্যের সঙ্গে সঙ্গে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আসতে বাধ্য, জার্মান মজুরেরা যেন তৎক্ষণাৎ তাকেই বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে নানা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারে; এইজন্যই যাতে, জার্মানিতে প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীগুলোর পতনের পর যেন বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধেই অবিলম্বে লড়াই শুরু হতে পারে।

কমিউনিস্টরা প্রধানত জার্মানির দিকে মন দিচ্ছে কারণ সে দেশে একটি বুর্জোয়া বিপ্লব আসন্ন, ইউরোপীয় সভ্যতার অধিকতর অগ্রসর পরিস্থিতির মধ্যে তা ঘটতে বাধ্য, এবং ঘটবে সতেরো শতকের ইংল্যান্ড ও আঠারো শতকের ফ্রান্সের তুলনায় অনেক বিকশিত এক সর্বহারা নিয়ে। এবং এই কারণে যে, জার্মানির বুর্জোয়া বিপ্লব হবে অব্যবহিত পরবর্তী সর্বহারা বিপ্লবের ভূমিকামাত্র।

সংক্ষেপে বলা যায় যে, কমিউনিস্টরা সর্বত্রই বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিটি বিপ্লবী আন্দোলন সমর্থন করে।

এই সব আন্দোলনেই তারা প্রত্যেকটির প্রধান প্রশ্ন হিসাবে সামনে তুলে ধরে মালিকানার প্রশ্ন, তার বিকাশের মাত্রা তখন যাই থাক না কেন।

শেষ কথা, সকল দেশের গণতন্ত্রী পার্টিগুলোর মধ্যে ঐক্য ও বোঝাপড়ার জন্য তারা সর্বত্র কাজ করে।

আপন মতামত ও লক্ষ্য গোপন রাখতে কমিউনিস্টরা ঘৃণা বোধ করে। খোলাখুলি তারা ঘোষণা করে যে তাদের লক্ষ্য সিদ্ধ হতে পারে কেবল সমস্ত প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সবল উচ্ছেদ মারফত। কমিউনিস্ট বিপ্লবের আতঙ্কে শাসকশ্রেণীরা কাঁপুক। শৃঙ্খল ছাড়া সর্বহারার হারাবার কিছু নেই। জয় করবার জন্য আছে গোটা দুনিয়া।

দুনিয়ার মজুদুর এক হও !