১৯১৯ সালে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের (মে-জুন) কোনো সময় বারাণসীতে চারু মজুমদারের জন্ম হয়। ৭ কিংবা ৮ বছর বয়সে শিলিগুড়ির (দার্জিলিং জেলা) মহানন্দা পাড়ার পারিবারিক নিবাসে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৩৭ সালে পাবনার (অধুনা বাংলাদেশে) এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষায় না বসে তিনি কলেজ ছেড়ে দেন এবং শিলিগুড়িতে ফিরে আসেন। তিনি যেন আবার স্কুলজীবন ফিরে পান এবং নিজেকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করেন। এরপর ১৯৩৮ সালে তিনি কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন। তাঁর পিতা বীরেশ্বর মজুমদার ছিলেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি। তাঁর মা উমাশঙ্করী দেবী ছিলেন অত্যন্ত প্রগতিশীল নারী এবং নানা সমাজসেবামূলক কাজ ও গণআন্দোলনে তিনি সাহায্য ও উৎসাহ যোগাতেন। চারু মজুমদারের জীবনকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৩৯-এ সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলায় যখন সিপিআই-এর একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়, যুবক চারু সত্বর সেখানে যোগদান করেন এবং দ্রুত সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে ওঠেন। চরমভাবে শোষিত কৃষক জনগণের মধ্যে তিনি কাজ শুরু করেন। জেলার কৃষি-অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিল আধিয়ার প্রথা (যে ব্যবস্থায় ভাগচাষিরা ফসলের অর্ধেক ভাগ পেতেন)। আধিয়ারদের ফসলের সিংহভাগই জমিদাররা গ্রাস করে নিত। আর এভাবেই তাদের ঐ জমিদারদের কাছ থেকেই অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হত। কিন্তু চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে ওঠা সুদ কখনোই শেষ করা যেত না এবং ঋণের বোঝা ক্রমাগত বাড়তে থাকত। এভাবে জলপাইগুড়ির কৃষকরা কার্যত নেমে আসেন ভূমিদাসের পর্যায়ে। কমিউনিস্ট পার্টিকে নিজেদের হাতের কাছে পাওয়া মাত্র তাঁরা সংগ্রামের পথে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পার্টির নেতৃত্বে কৃষক সমিতি ও প্রতিরোধের স্কোয়াডগুলো গড়ে ওঠে। কিন্তু আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নও তীব্রতর হয়।

একদিন পার্টির জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সম্পাদক তাঁর অফিসে মাথায় চিরুনি পড়েনি, এক জোড়া উজ্জ্বল চোখের অধিকারী এক সপ্রতিভ, সুদর্শন যুবককে প্রবেশ করতে দেখেন। যুবককটি বলে, “আমি চারু মজুমদার। আমি কৃষকদের মধ্যে পার্টির কাজ করতে চাই।” সম্পাদক প্রশ্ন করলেন, “তুমি কি কষ্ট সহ্য করতে পারবে?” ঝটিতে আত্মবিশ্বাসে ভরা জবাব এলো হ্যাঁ-বাচকভাবে।

জেলা সম্পাদক শচীন দাশগুপ্ত এরপর তাঁকে নিয়ে ডুয়ার্স অঞ্চলের গ্রামগুলিতে পরিভ্রমণ করতে থাকলেন – বিস্তীর্ণ এলাকায় পায়ে হেঁটে, একটানা কম করে তিন মাস ধরে। তাঁরা গরিব কৃষকদের ঘরে আশ্রয় নিতেন। কোনো সময় তাঁদের খাবার জুটতো, কোনো সময় জুটতো না। কখনও কখনও তাঁদের খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হত, কোনো কোনো দিন জলঢাকা নদীর ব্রিজের ওপর শুয়ে পড়তেন, কখনও বা কোনো গোয়ালঘরে ঘুমিয়ে পড়তেন।

এভাবেই যে কোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার এবং কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সামর্থ্যকে চারু মজুমদার প্রমাণ করেন। শচীন দাশগুপ্তও নিশ্চিত ও আশ্বস্ত বোধ কএমনি করেই চারু মজুমদারের কষ্ট সহ্য করার ও কৃষকদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রথম সচেতন অধ্যায়ের শুরু হয়।

অতি অল্পকালের মধ্যেই চারু মজুমদার কৃষকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁকে দেখলেই কৃষকদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ খেলে যেত। তিনিও কৃষকদের মনকে বোঝার ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ১৯৪২-এ চারু মজুমদার পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। ১৯৪২-এর পর চা-বাগান ও রেল-শ্রমিকদের মধ্যে পার্টির কাজ যখন বিস্তারলাভ করে তিনি সেখানকার কাজেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকেন।

১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর প্রস্তাব অনুসারেই আধিয়ারদের জঙ্গী আন্দোলন সংগঠিত হয়। জমিদাররা তাদের শস্যের গোলা পাহারা দিয়ে রাখায় আধিয়ারদের অনাহারে মরতে হচ্ছিল। পার্টি শ্লোগান তুলল – আমরা গুলি খেয়ে মরব তবু না খেয়ে মরব না।

গরিব জনগণের কাছে এই শ্লোগান দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জোতদারদের গোলা থেকে তারা ধান দখল করতে শুরু করেন। সেই ধান কমিটির মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হতে থাকে। বিক্রিত অর্থ জোতদারদের দিয়ে দেওয়া হয়। যে সব জোতদার এই ব্যবস্থা মানতে নারাজ হত ও উল্টে আদালতে মামলা ঠুকে দিত তাদের সঙ্গে আইনি লড়াই চালানোর জন্য ফসল বিক্রির টাকার একটা অংশ সঞ্চয় করে রাখা হত।

১৯৪৫-এর শেষের দিকে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। সি এম-কে অধুনা বাংলাদেশের অধীন এবং তেভাগা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র পচাগড় থেকে আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আত্মগোপন করে তিনি কাজ চালাতে থাকেন এবং তাঁর পরিচালনায় বড় একটা এলাকা প্রায় মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় তিনি যে সমস্ত অতীব মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেন পরবর্তীকালে সেগুলিই তাঁকে নকশালবাড়ি আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানে সহায়তা করে।

তীব্র পুলিশী নির্যাতনকে অগ্রাহ্য করে সমগ্র ডুয়ার্স অঞ্চলে সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে। চা-বাগান শ্রমিক ও কৃষকরা অনেকগুলি যুক্ত মিছিল সংগঠিত করেন এবং তাঁরা জোতদারদের ফসল দখল করে নেন। এই রকমই এক সংগ্রামের সময় জলপাইগুড়ি জেলার মঙ্গলাবাড়ি-নিউ রামাঝারি অঞ্চলে কৃষকরা পুলিশের কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং তাঁদের মধ্যে ১১ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই সংগ্রাম রেল-শ্রমিকদেরও ভালো মাত্রায় প্রভাবিত করে। বাংলা-ডুয়ার্স রেলওয়েতে এক শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিট গড়ে ওঠে।

আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুলিশী নিপীড়নও তীব্রতর হতে থাকে। যখন পার্টি কর্মীরা শ্রমিক-কৃষকের সম্মিলিত আন্দোলনকে সমস্ত বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক তখনই সরকার কর্তৃক আন্দোলনকে ন্যায়সঙ্গত বলে স্বীকার করে নেওয়ার কারণ দেখিয়ে পার্টির রাজ্য কমিটি আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু চারু মজুমদার এবং স্থানীয় অন্যান্য নেতৃবর্গ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন পিছু হঠার কোনো প্রশ্ন তো ওঠেই না, পরন্তু কেন ভূমিহীন ও গরিব কৃষকদের সংগ্রামে সামিল করা গেল না এবং কর্মীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কেন দিশা প্রদর্শন করা গেল না সে বিষয়ে রাজ্য কমিটির পর্যালোচনা করা উচিত।

রাজ্য কমিটি ম্যানডেট জারি করে এবং দার্জিলিং-এর কমরেডদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা বুঝলেন, ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করা হল। চারু মজুমদারের কাছে এটা ছিল বিশাল এক মানসিক ধাক্কা। তিনি জানতেন, এবার পুলিশ ভয়াবহ অত্যাচার নামাবে। আর বাস্তবে সেটাই ঘটলো।

১৯৪৮-এ পার্টি অফিসে কমরেডরা যখন দ্বিতীয় কংগ্রেসের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করছেন তখন পুলিশ এসে চারু মজুমদার সহ সকলকে গ্রেপ্তার করল। তাঁকে প্রথমে জলপাইগুড়ি জেলে আটক রাখা হল, তারপর দমদম জেলে স্থানান্তরিত করা হল। পরবর্তীকালে তাঁকে দমদম থেকে সরাসরি উড়িয়ে নিয়ে এসে বক্সার জেলে বন্দি করে রাখা হল। ১৯৫১ সালে তিনি মুক্তি পেলেন।

১৯৫২-র ৯ জানুয়ারী তিনি লীলা সেনগুপ্তকে বিবাহ করেন। লীলা সেনগুপ্তও ছিলেন পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী। বিবাহের পর তাঁরা দুজনই সিপিআই-এর দার্জিলিং জেলা কমিটির সদস্য হন। সেই সময় সি এম গ্রামাঞ্চলে কাজ করার সাথে সাথে চা-বাগান শ্রমিকদের মধ্যেও কাজ করতেন। তিনি শিলিগুড়ি রিক্সাচালক ইউনিয়নেরও ছিলেন সভাপতি।

১৯৫৬-তে পালঘাটে অনুষ্ঠিত সিপিআই-এর তৃতীয় কংগ্রেসে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিনিধি। সেই সময় থেকেই সিপিআই লাইনের সাথে তাঁর বিরোধিতা তীব্র হতে শুরু করে। ১৯৫৭-তে পার্টি নেতৃত্ব তাঁকে কলকাতায় আসার আহ্বান জানায় এবং রাজ্য স্তরে কৃষক সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য তাঁকে দায়িত্ব দিতে চায়। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জানান।

ইতিমধ্যে তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। আরও বড় বিষয় হল, পার্টি লাইনের সঙ্গে দিন দিন তাঁর সংঘাতও বেড়ে চলে। এসবের কারণে কিছু সময়ের জন্য নৈরাশ্য তাঁকে বিপর্যস্ত করে। এরপর ১৯৬০-এর দশকের প্রথমার্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যকার মহা বিতর্কের আবহে উজ্জীবিত দার্জিলিং-এর কমরেডরা স্থির করলেন যে পার্টি সংগঠনকে অবশ্যই মজবুত করে তুলতে হবে এবং জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং-এর দুটি বাছাই করা এলাকায় মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হবে।

চীনা পত্রপত্রিকা অধ্যয়নের মাধ্যমে অর্জিত উপলব্ধিসমূহের ভিত্তিতে দলিল প্রস্তুত করার দায়িত্ব বর্তায় চারু মজুমদারের ওপর এবং তিনি নকশালবাড়ি এলাকার কাজকে পরিচালনা করতে শুরু করেন। ১৯৬২-তে ঐ দলিল প্রস্তুত হয় এবং তা রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রমোদ দাশগুপ্ত তখন জেলে। তিনি অভিমত প্রকাশ করলেন, যিনি এই দলিল লিখেছেন তাকে অবিলম্বে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা উচিত। কিন্তু অন্যান্য নেতারা ভিন্নমত হওয়ায় এই নির্দেশ কার্যকর হল না।

১৯৬৩-র জানুয়ারীতে শিলিগুড়ি বিধানসভা আসনের জন্য উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় কমরেডদের চাপে পার্টি নেতৃত্ব সি এম-কে পার্টির প্রার্থী মনোনীত করতে বাধ্য হয়। জেল থেকে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। প্রচারের সময় তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনীতিকে তুলে ধরেন এবং চীন আক্রমণকারী বলে ভারত সরকারকে নিন্দা জানান। এভাবে তিনি সরাসরি পার্টি লাইনের বিরোধিতা করেন। তিনি ৩০০০-এর কম ভোট পান এবং তাঁর জামানত জব্দ হয়। তিনি বললেন, “আসুন, আমরা বিজয় মিছিল বার করি। কারণ এত যে মানুষ সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার বিরুদ্ধে ভোট দিলেন – তা এক বিরাট সাফল্য।” সেই মতো মিছিলও সংগঠিত হয়।

১৯৬৪-তে তীব্র আন্তঃপার্টি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সিপিআই(এম)-এর জন্ম হলে সি এম সিপিআই(এম)-এ যোগ দেন। কিন্তু ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথম ভাঙ্গনটি কেবলমাত্র ভবিষ্যতের আরও মৌলিক সংগ্রামেরই পূর্বাভাস বলে প্রমাণিত হয়।

সিপিআই(এম) নেতৃত্ব বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তুলতে অস্বীকার করায় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পথ গ্রহণ করায় সি এম এই নয়া সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে তত্ত্বে ও অনুশীলনে সত্যিকার বিপ্লবীদের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। নকশালবাড়ি সমগ্র জাতি ও দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দেয়। সিপিআই(এম)-এর মধ্যকার এবং বাইরের কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ১৯৬৮-র শেষ দিকে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সারা ভারত কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে (এআইসিসিসিআর) মিলিত হন এবং ১৯৬৯-এর ২২ এপ্রিল সিপিআই(এমএল) গঠিত হয়। বাকিটা তো ইতিহাস।

চারু মজুমদারের পারিবারিক জীবন ও জেল-জীবন তাঁর এই অত্যন্ত ব্যতিক্রমী গতিময় রাজনৈতিক জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাঁর দুই কন্যা ও এক পুত্রের কাছে তিনি ছিলেন স্নেহশীল পিতা। শিক্ষক হয়ে তাদের পড়াশোনাও তিনি দেখিয়ে দিতেন। তিনি চাইতেন কোনো ইংরাজি ব্যাকরণ ও অভিধান ছাড়াই তারা ইংরাজি উপন্যাস পাঠ করুক। তিনি বলতেন, “এভাবেই তো ইংরাজি শিখতে হয়।” তিনি তাদের রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র ও বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাবলী পাঠ করতেও উৎসাহ দিতেন। ধ্রুপদী সঙ্গীতের তিনি ছিলেন গভীর অনুরাগী। রেডিওতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের তিনি ছিলেন নিয়মিত শ্রোতা।

এই বিপ্লবী নেতাকে বহুবার কারাবন্দি থাকতে হয়েছে আর বন্দি জীবনকে তিনি গভীর অধ্যয়নের কাজে লাগাতেন। ১৯৬৪ থেকে জীবনের শেষ দিন অবধি তিনি হাঁপানির মতো দুরারোগ্য হৃদরোগ ও আরও নানান জটিল অসুখে ভুগতেন। তথাপি ১৬ জুলাই ১৯৭২ জীবনে শেষবারের মতো গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত আত্মগোপন অবস্থায় বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কলকাতার কুখ্যাত লালবাজার লক-আপে 'জিজ্ঞাসাবাদের' সময় তাঁকে অমানুষিক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু কোনো স্বীকারোক্তি অথবা বিন্দুমাত্র গোপন তথ্য তাঁর কাছ থেকে আদায় করা যায়নি।

বিপ্লবের চূড়ান্ত জয় সম্পর্কে প্রগাঢ় প্রত্যয় নিয়ে এই মহান বিপ্লবী ২৮ জুলাই ১৯৭২ ভোর প্রায় ৪টের সময় মাথা উঁচু করে শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মরদেহ এমনকি তাঁর পরিবারের হাতেও তুলে দেওয়া হয়নি। তাঁর পরিবারের নিকটতম সদস্যদের সঙ্গে রেখে পুলিশ তাঁর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যায়। সমস্ত এলাকাটা পুলিশী-বেষ্টনীতে ঘিরে রাখা হয় এবং তাঁর দেহ যখন আগুনের শিখা হয়ে জ্বলতে থাকে তখন তা দেখার জন্য একজনেরও অনুমতি মেলেনি।