ইস্তাহার যখন লেখা হয়েছিল সেই সময় ইউরোপ ও আমেরিকায় সর্বহারা দ্রুতই আত্ম-আবদ্ধ শ্রেণী থেকে আত্ম-সচেতন শ্রেণী হিসাবে বিকাশ লাভ করছিল – যে শ্রেণী তার নিজের মু্ক্তির শর্তগুলো এবং বিশ্বে তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। এই দলিলে উল্লিখিত তার দুটি বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টরূপেই প্রতিপন্ন হয়েছিল – লাগাতার নিঃস্বকরণ ও বিপ্লবী উদ্দীপনা। এই দিকগুলো সম্পর্কে আজকের পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন?

আজকের মতো সেই সময়েও দেশ নির্বিশেষে ও নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে মজুরি ভেদ যথেষ্ট ছিল, শ্রমিকদের কিছু অংশ অন্যদের তুলনায় বেশি বেতন পেত। পুঁজিবাদে মজুরির এরকম সার্বিক ও সরল রৈখিক হ্রাস ঘটেনা; মার্কস ও এঙ্গেলস কোথাও সেকথা বলেননি। “মজুরির লৌহকঠিন সূত্র” সম্পর্কে তত্ত্বটা প্রচার করেছিলেন লাসালে এবং মার্কস সেটিকে পুরোপুরি খণ্ডন করেছিলেন।

মার্কসবাদীরা স্বীকার করেন যে, নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এবং নির্দিষ্ট সময়কালে – যথা, বাণিজ্যের তেজি পরিস্থিতিতে, যখন শ্রমের বর্ধিত চাহিদা শ্রমিকদের দরকষাকষির ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলে বর্ধিত হারে মজুরি আদায়ে সক্ষম করে তোলে, আর মুনাফার হার বেশি থাকায় ধর্মঘটের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে পুঁজিপতিরা তা মেনে নেওয়াই শ্রেয় মনে করে; উৎপাদন ক্ষমতার বড় রকম বৃদ্ধির সময়কালে; শ্রমিক আন্দোলনের জোয়ারের সময় – প্রকৃত মজুরি বাড়তে পারে, আর এর বিপরীত পরিস্থিতিতে তা হ্রাসের দিকে ঝোঁকে। স্পষ্টতই, ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নগামী এই প্রবণতাগুলোর দেশ ভেদে এবং একই দেশের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পে তারতম্য ঘটে। যে বিষয়গুলো এই ফারাককে নির্ধারণ করে তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিবাদমান দুটি শ্রেণীর অর্থাৎ, পুঁজিপতি ও শ্রমিকদের আপেক্ষিক শক্তি।

এই সাধারণ নিয়মের অধীনে দরিদ্রকরণ ও নিঃস্বকরণ চূড়ান্ত অর্থে বা আপেক্ষিক অর্থে ঘটতে পারে। যে অংশগুলোর ক্ষেত্রে প্রথমটি ঘটতে পারে সেগুলো হল (ক) “শ্রমিকদের মজুত বাহিনী”, অর্থাৎ বেকারবাহিনী, (খ) বয়স্ক, পঙ্গু ইত্যাদি, যাদের পাকাপাকিভাবে বরখাস্ত করা হয়, এবং (গ) অসংগঠিত বা সংগঠিত শ্রমিকদের নিম্নতম স্তর। এর আগে যেমন উল্লিখিত হয়েছে, আমাদের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি যে, পুঁজির প্রাথমিক সঞ্চয় অথবা বঞ্চনার মাধ্যমে সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া প্রান্তিক মানুষের একটা বড় অংশকে একেবারে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।

আপেক্ষিক দরিদ্রকরণ সম্পর্কে আমাদের সর্বপ্রথমে মনে রাখতে হবে যে, প্রাচুর্যের মতোই দারিদ্রও একটি পুরোপুরি আপেক্ষিক বিষয়। শ্রমের বোঝা বেড়ে চলার ফলে, উচ্চতর দক্ষতা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণের প্রয়োজন বাড়ার দরুণ, ক্রমবর্ধমান নগরায়ন এবং গোটা সমাজজুড়ে জীবনযাত্রার মানে উন্নতি ঘটায়, জীবনধারণের খরচও বেড়ে চলার কারণে শ্রমিক ও কর্মচারিদের ন্যূনতম প্রয়োজনটাও লাগাতার বাড়তে থাকে। যখন টাকার অঙ্কে মজুরি বাড়ে বা এমনকি প্রকৃত মজুরি (টাকার অঙ্কে মাপা মজুরি নয়, বরং যে সমস্ত পণ্য ও পরিষেবা সেই মজুরিতে পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে মাপা, অর্থাৎ মূল্যসূচকে পরিবর্তনের ফলে টাকার অঙ্কে মজুরির পুনর্বিন্যাস) একই থাকে অথবা সামান্য বাড়ে, তখনও শ্রমিকদের আপেক্ষিক দরিদ্রকরণ ঘটতে পারে, কারণ তাদের প্রকৃত প্রয়োজন আরও দ্রুত বাড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটে, এবং জাতীয় আয়ে মুনাফার সাপেক্ষে মজুরির অনুপাত রূপে এটাকে মাপা যায়। অর্থব্যবস্থার পৃথক পৃথক ক্ষেত্রেও তাকে মাপা যায়। বাস্তব ক্ষেত্রের কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

আমাদের দেশে শ্রমিকদের বর্ধিত উৎপাদনশীলতাই ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে উচ্চহারে বৃদ্ধির চালিক শক্তি রূপে কাজ করেছিল। কিন্তু এই বৃদ্ধির ফল শ্রমিকরা পাননি। ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে নীট যুক্ত মূল্যের অংশ হিসাবে মজুরি ১৯৮০-এর দশকে দাঁড়িয়েছিল ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, ১৯৯০-এর দশকে নেমে গিয়ে তা হয় ২০ শতাংশের মতো এবং ২০০৮-০৯ সালে তা সর্বকালের মধ্যে কম হয়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে। খুব স্বাভাবিকভাবেই, যুক্ত হওয়া নীট মূল্যের অংশ হিসাবে মুনাফা ১৯৮০-র দশক জুড়ে যেখানে ছিল ২০ শতাংশের আশেপাশে, ১৯৯০-এর দশকে তা বেড়ে গিয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি হয়, এবং আরও ব্যাপক হারে বেড়ে ২০০৮-এ দাঁড়ায় ৬০ শতাংশে যা প্রায় অবিশ্বাস্য। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল পরিষেবা ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রে মজুরির অংশ ১৯৮০-র দশকের ৭০ শতাংশ থেকে কমে ২০০৯ সাল নাগাদ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশেরও কম, অন্যদিকে মুনাফার অংশ ১৯৯০-এর দশকের ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০৪-০৫ সালের পর ৫০ শতাংশ ছাপিয়ে যায়।

আসপেকটস অফ ইন্ডিয়ান ইকনমি পত্রিকার ৫৫তম http://rupe-india.org/55/wages.html সংখ্যা ভারতীয় শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান বঞ্চনা, তাদের পাল্টা লড়াই এবং আংশিক সাফল্য সম্পর্কে এক চিত্তাকর্ষক আখ্যান তুলে ধরেছে।

২০০৯-১০ সালে শেষ হওয়া দশকে প্রকৃত মজুরি – বিশেষত অটোমোবাইল সেক্টরে – তীব্র হারে কমে যায়। কিন্তু শিল্পসমূহের বার্ষিক সমীক্ষা (২০১১-১২) দেখায় যে, অনেক বছর ধরে চলা প্রবণতার বিপরীতে গিয়ে কারখানা শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি ২০১০-১১ সালে ৮.৫ শতাংশ এবং ২০১১-১২ সালে ৬.৩ শতাংশ বাড়ে। তবে, মজুরি-স্তর কিন্তু ১৯৯৫-৯৬ সালের নীচে থেকে যায়। এ কথাটা অটোমোবাইল সেক্টরের পরিপ্রেক্ষিতেও সত্যি। যেখানে গত দু-বছরে প্রকৃত মজুরি বেড়েছে যথাক্রমে ৬.৩ শতাংশ ও ৩ শতাংশ। অার এর জন্য মারুতি কারখানার শ্রমিকদের অভূতপূর্ব দমনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল : তাদের ১৪৮ জনকে মাসের পর মাস ধরে জেলে পচতে হয়েছে এবং ২০০০ জনেরও বেশিকে বরখাস্ত করা হয়।

মোট মজুরি ও বেতনের মধ্যে শ্রমিকদের ও পরিচালকমণ্ডলীর আপেক্ষিক অংশের দিক থেকেও শ্রমিকদের বঞ্চনার হিসাব করা যেতে পারে। শ্রমিকদের মজুরি ১৯৯১-৯২-এর ৬৪.৮ শতাংশ থেকে কমে ১৯৯৭-৯৮ সালে ৫৬.৯ শতাংশ, ২০০৭-০৮ সালে ৪৮.৪ শতাংশ এবং তারপর ২০১১-১২ সালে ৪৬.৫ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থাৎ শিল্প ক্ষেত্রের 'বেতন বিল'-এর অর্ধেকেরও কম এখন শ্রমিকদের কাছে যায়।

গোটা বিশ্বজুড়েই এই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, অন্তত দীর্ঘ মেয়াদে। উদারহণস্বরূপ, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশটির কথাই ধরা যাক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৯ থেকে ২০০৭-এর মধ্যে অ-তত্ত্বাবধায়ক শ্রমিকদের ঘণ্টা-প্রতি গড় মজুরি ১ শতাংশ কমে যায়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষেত্রের বাইরে কর-পরবর্তী কর্পোরেট মুনাফা বাড়ে ২৫৫ শতাংশ, যা সত্যিই হতবাক করে দেওয়ার মতো। ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিসটিকস-এর হিসাব অনুযায়ী, ঐ দেশে ১৯৮০ থেকে ২০১৩-র মধ্যে উৎপাদনশীলতা বাড়ে ৯৩ শতাংশ, আর বেতন বাড়ে ৩৮ শতাংশ (উভয় ক্ষেত্রেই মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের পর)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রায় স্থিতাবস্থায় রয়েছে, কিন্তু একেবারের ওপর তলায় ১ শতাংশের বেতন ও আনুষঙ্গিক সুযোগসুবিধা বেড়েছে ১৬৫ শতাংশ, এবং ০.১ শতাংশের বৃদ্ধি হয়েছে ৩৬২ শতাংশ। এর সঙ্গেই গত ৪০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ করের হার ৭০ শতাংশ থেকে কমে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি কর ছাড় দেওয়া হয়েছে পুঁজির ওপর আয়ের ক্ষেত্রে, যার মধ্যে কর্পোরেট ও উত্তরাধিকার করও রয়েছে।

নিঃস্বকরণের মতোই শ্রমিকদের বিপ্লবী চরিত্রকেও মার্কস ও এঙ্গেলস কোনো বিমূর্ত, চূড়ান্ত সত্য রূপে দেখেননি। তাঁরা শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে নানা অ-সর্বহারাসুলভ প্রবণতা সম্পর্কেও অবহিত ছিলেন; এঙ্গেলস এমনকি ইংল্যান্ডে “বুর্জোয়া সর্বহারা”র একটি অংশের কথাও বলেছেন, যাদের ব্রিটিশ বুর্জোয়ারা তাদের ঔপনিবেশিক কার্যকলাপ এবং শিল্পক্ষেত্রে প্রাধান্য থেকে লাভ করা বিপুল মুনাফার কিছু অংশ উৎকোচ হিসাবে দিত।মার্কসের কাছে এঙ্গেলসের ১৮৫৮-র ৭ অক্টোবর লেখা চিঠি দেখুন, যাতে লন্ডন থেকে তিনি লিখছেন : “ … ইংল্যান্ডের সর্বহারারা বাস্তবে ক্রমেই অারও বেশি করে বুর্জোয়া হয়ে উঠছে।” (মার্কস ও এঙ্গেলসের নির্বাচিত পত্রাবলী) পরবর্তীকালে লেনিন “শ্রমিকদের অভিজাততন্ত্র”র ধারণাটি সামনে আনেন। এঁরা হলেন সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী দেশেই উপনিবেশগুলো থেকে আহরিত অতি মুনাফার ভিত্তিতে লালিত একটা ছোট অংশ, আর এর মধ্যেই তিনি সংস্কারবাদ/দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে চিহ্নিত করেছেন।বিশেষভাবে দেখুন, সাম্রাজ্যবাদ এবং সমাতন্ত্রে ভাঙ্গন (লেনিনের সংগৃহীত রচনাবলী, খণ্ড ২৩) এর সাথেই তিনি অবশ্য দেখিয়েছেন, রাশিয়ায় ধাতু ক্ষেত্রের সবচেয়ে বেশি মজুরি পাওয়া শ্রমিকরাই ১৯০৫-এর বিপ্লবে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। আমাদের দেশেও আমরা অতীতেও দেখেছি এবং বর্তমানেও এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেখতে পাচ্ছি, যেখানে সংগঠিত এবং ভালো বেতন পাওয়া বন্দর ও ডক, রেল, কয়লা ও বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক, অটোমোবাইল, ইত্যাদি সেক্টরের শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। অপরদিকে আমাদের সামনে এমন প্রচুর দৃষ্টান্তই রয়েছে – রাশিয়ায়, আমাদের দেশে এবং অন্যান্য দেশে – যেখানে দেখা গেছে যে, শ্রমিকদের সবচেয়ে দরিদ্র অংশ বিপ্লবে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিয়েছেন।

এইভাবে ইতিহাসের তথ্য থেকে আমরা জানতে পারছি, দারিদ্র বাড়লেই বিপ্লবী প্রবণতা বাড়বে এমন কথা নেই। সমস্ত কিছুই নির্ভর করে বাস্তব পরিস্থিতির বিভিন্ন দিকের সমাহারের ওপর এবং যেটা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হল, যথেষ্ট বিষয়ীগত প্রস্তুতির এবং গৃহীত নীতিমালা ও কৌশলের সঠিকতার ওপর।

সর্বহারা সম্পর্কে আমাদের আলোচনার একটা সারসংক্ষেপ করে নেওয়া যাক। ইস্তাহার সর্বহারার বিপ্লবী ভূমিকাকে চিহ্নিত করেছে প্রধানত উৎপাদন ও বিতরণের পুঁজিবাদী সংগঠনের মধ্যে তার বস্তুগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রেণীর স্তর-বিন্যাসে তার স্থানের মধ্যে। “আজকের সমাজের নিম্নতম স্তর” হওয়ায় সে “তার ওপর চাপানো সমগ্র সরকারী সমাজকে শূন্যে উৎক্ষিপ্ত না করে লড়তে পারে না, উঠে দাঁড়াতে পারে না” (প্রথম অধ্যায়)। পবিত্র পরিবার গ্রন্থে ইস্তাহার-এর রচয়িতারা বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন :

“সমাজতান্ত্রিক লেখকরা যদি বিশ্ব-ঐতিহাসিক এই ভূমিকাকে সর্বহারার জন্য নির্দিষ্ট করে থাকেন তবে তা এই জন্য নয় যে তাঁরা সর্বহারাকে ভগবান বলে মনে করেন। … দু-একজন সর্বহারা বা সমগ্র সর্বহারা কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্তে তার লক্ষ্য হিসাবে কী ভাবছেন – সেটা বড় কথা নয়। এটা হল সর্বহারা কী এবং তার প্রকৃতি অনুযায়ী কোন বিষয়টি তাকে ঐতিহাসিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে তা জানার প্রশ্ন”।

এই তাত্ত্বিক অবস্থান থেকে শুরু করে এবং বিগত ১৭০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা এই সিদ্ধান্ত টানতে পারি যে (ক) শ্রমিকশ্রেণীর (উদারহণস্বরূপ, “কায়িক” ও “বৌদ্ধিক” – এই দু-ধরনের শ্রমে রত শ্রমিকদের এবং বিধিবদ্ধ ও অবিধিবদ্ধ শ্রমিকদের আপেক্ষিক অনুপাত) গঠন পুঁজিবাদী উৎপাদন ও বণ্টনের পরিবর্তনশীল কাঠামোর সাথে সাথে অবধারিতভাবেই পাল্টে যেতে থাকে, এবং ভবিষ্যতেও এটাই ঘটতে থাকবে, (খ) এই ধরনের পরিবর্তন এবং তার সঙ্গে কাজ ও জীবনধারণের পরিবেশে পরিবর্তন আন্দোলন ও সংগঠনের পক্ষে সহায়ক হয় বা তাকে আরও কঠিন করে তোলে, (গ) এই সমস্ত পরিবর্তন সত্ত্বেও উৎপাদনের উপায়গুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে রক্ষা করার কোনো স্বার্থ সর্বহারা শ্রেণীর না থাকায় সে ঐ ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ সাধনের, অর্থাৎ পুঁজিবাদের সমাজতন্ত্রে রূপান্তরণে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বস্তুগতভাবে সবচাইতে মজবুত অবস্থানে রয়েছে, এবং (ঘ) বিষয়ীগতভাবে এই ঐতিহাসিক ব্রত পালনের জন্য তার বিপ্লবী পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিকে সর্বহারাকে প্রশিক্ষিত ও সংগঠিত করতে হবে, যে পার্টির মধ্যে এই বাস্তব লক্ষ্য আত্মসচেতন ও সংহত প্রকাশ লাভ করে। এখান থেকে আমরা যাই কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের রণনীতি ও রণকৌশল প্রসঙ্গে।