বর্তমান সংস্করণের ভূমিকা হায় আমাকে একলাই সই করতে হবে। ইউরোপ ও আমেরিকার সমগ্র শ্রমিকশ্রেণী যাঁর কাছে সবচাইতে বেশি ঋণী সেই মার্কস হাইগেট সমাধি-ভূমিতে শান্তিলাভ করেছেন। তাঁর সমাধির ওপর ইতিমধ্যেই প্রথম তৃণরাজি মাথা তুলেছে। তাঁর মৃত্যুর পর 'ইস্তাহার'-এ সংশোধন বা সংযোজন আরও অভাবনীয়। তাই এখানে স্পষ্টভাবে নিম্নলিখিত কথাগুলো আবার বলা আমি প্রয়োজন মনে করি :

'ইস্তাহার'-এর ভিতরে যে মূল চিন্তা প্রবাহমান তা হল এই : ইতিহাসের প্রতি যুগে অর্থনৈতিক উৎপাদন এবং যে সমাজ-সংগঠন তা থেকে আবশ্যিকভাবে গড়ে ওঠে তা-ই থাকে সে যুগের রাজনৈতিক ও মানসিক ইতিহাসের মূলে, সুতরাং (জমির আদিম যৌথ মালিকানার অবসানের পর থেকে) সমগ্র ইতিহাস হয়ে এসেছে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস, সামাজিক বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ের শোষিত ও শোষক, অধীনস্থ ও অধিপতি শ্রেণীর সংগ্রামের ইতিহাস; কিন্তু এই লড়াই আজ এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে শোষিত ও নিপীড়িত শ্রেণী (সর্বহারা) নিজেকে শোষক ও নিপীড়ক শ্রেণীর (বুর্জোয়া) কবল থেকে উদ্ধার করতে গেলে সেইসঙ্গে গোটা সমাজকে শোষণ, নিপীড়ন ও শ্রেণীসংগ্রাম থেকে চিরদিনের মতো মুক্তি না দিয়ে পারে না – এই মূল চিন্তাটি পুরোপুরি ও একমাত্র মার্কসেরই চিন্তা ইংরাজি অনুবাদের মুখবন্ধে অামি লিখেছিলাম : 'ডারউইনের মতবাদ জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যা করেছে, অামার মতে এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসের বেলায় তাই করতে বাধ্য। ১৮৪৫ সালের অাগেকার কয়েক বছর ধরে অামরা দুজনেই ধীরে ধীরে এই সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে চলেছিলাম। স্বতন্ত্রভাবে অামি কতটা এদিকে অগ্রসর হয়েছিলাম তার সবচেয়ে ভালো নিদর্শন অামার “ইংল্যান্ডে শ্রমিকশ্রেণীর অবস্থা” বইখানি। কিন্তু যখন ১৮৪৫ সালের বসন্তকালে ব্রাসেলস শহরে মার্কসের সঙ্গে অামার অাবার দেখা হল, তখন মার্কস ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছেন। এখানে অামি যে ভাষায় মূলকথাটা উপস্থিত করলাম প্রায় তেমন পরিষ্কারভাবেই তিনি তখনই তা অামার সামনে তুলে ধরেছিলেন।' (১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা)

একথা আমি বহুবার বলেছি। কিন্তু ঠিক আজকেই এ বক্তব্য 'ইস্তাহার'-এর পুরোভাগেও রাখা প্রয়োজন।

ফ্রেডারিক এঙ্গেলস
লন্ডন, ২৮ জুন, ১৮৮৩