মেহনতি মানুষের সংগঠন 'কমিউনিস্ট লীগ' প্রথমটা ছিল পুরোপুরি জার্মান ও পরে আন্তর্জাতিক, এবং ১৮৪৮ সালের আগেকার ইউরোপ মহাদেশের রাজনৈতিক অবস্থাতে তাকে অনিবার্যভাবে হতে হয় গুপ্ত সমিতি। এই 'ইস্তাহার' প্রকাশিত হয়েছিল তারই কর্মসূচী হিসাবে। ১৮৪৭ সালের নভেম্বরে লীগের লন্ডন কংগ্রেসে মার্কস ও এঙ্গেলসের ওপর ভার দেওয়া হয়েছিল একটা বিশদ তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পার্টি কর্মসূচী প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করতে। ১৮৪৮-এর জানুয়ারীতে জার্মানে লেখা পাণ্ডুলিপিটি ২৪ ফেব্রুয়ারীর ফরাসি বিপ্লবের কয়েক সপ্তাহ আগে লন্ডনে মুদ্রাকরের কাছে পাঠানো হয়। ১৮৪৮ সালের জুন অভ্যুত্থানের সামান্য আগে এর ফরাসি অনুবাদ প্যারিসে প্রকাশ হয়। শ্রীমতী হেলেন ম্যাকফারলেন কৃত প্রথম ইংরাজি অনুবাদ বের হয় ১৮৫০ সালে লন্ডনে জর্জ জুলিয়ান হার্নির Red Republican পত্রিকায়। ডেনিশ ও পোলীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছিল।

১৮৪৮ সালের জুন মাসে সর্বহারা ও বুর্জোয়ার প্রথম মহাসংগ্রাম, প্যারিস অভ্যুত্থানের পরাজয় ইউরোপীয় শ্রমিকশ্রেণীর সামাজিক ও রাজনৈতিক আকাঙ্খাকে ফের কিছুদিনের মতো পিছনে হটিয়ে দিল। তারপর থেকে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের আগেকার মতো ফের কেবল মালিকশ্রেণীর নানা অংশের মধ্যেই ক্ষমতা দখলের লড়াই চলতে থাকে; শ্রমিকশ্রেণীকে নেমে আসতে হয় রাজনৈতিক অস্তিত্বের লড়াইটুকুতে, মধ্য শ্রেণীর রঽ৷ ডিক্যাল দলের চরমপন্থী অংশ রূপে দাঁড়াতে হয় তাদের। যেখানেই স্বাধীন সর্বহারার আন্দোলনে জীবনের লক্ষণ দেখা গেল, সেখানেই তাকে দমন করা হল নির্মমভাবে। এইভাবেই সে সময়ে কলোন শহরে অবস্থিত কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে হানা দেয় প্রাশিয়ার পুলিশ। তার সভ্যরা গ্রেপ্তার হল এবং আঠারো মাস কারাবাসের পর ১৮৫২ সালের অক্টোবরে তাদের বিচার হয়। এই প্রসিদ্ধ 'কলোন কমিউনিস্টদের বিচার' চলেছিল ৪ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর; বন্দিদের সাতজনকে তিন থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল এক দুর্গের অভ্যন্তরে। দণ্ড ঘোষণার অব্যবহিত পরে, বাকি সভ্যরা লীগ সংগঠনকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়। আর 'ইস্তাহার' সম্বন্ধে মনে হল যে এরপর থেকে তার ভাগ্যে বিস্মৃতির নির্বন্ধ।

ইউরোপীয় শ্রমিকশ্রেণী যখন শাসকশ্রেণীর ওপর আর একটা আক্রমণের মতো পর্যাপ্ত শক্তি ফিরে পায়, তখন আর্বিভূত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মানুষের সমিতি (International Working Men's Association)। ইউরোপ ও আমেরিকার সমগ্র জঙ্গী সর্বহারাকে একক সংগঠনে সংগঠিত করার বিশেষ উদ্দেশ্য থাকার দরুন এই সমিতি কিন্তু 'ইস্তাহার'-এ লিপিবদ্ধ মূলনীতিগুলো সরাসরি ঘোষণা করতে পারেনি। আন্তর্জাতিকের কর্মসূচী বাধ্য হয়েই এতটা উদার করতে হয় যাতে তা গ্রহণীয় হয় ইংরেজ ট্রেড ইউনিয়ন, ফ্রান্স-বেলজিয়াম-ইতালি ও স্পেনের প্রুধোঁবাদী, এবং জার্মান লাসালপন্থীদের লাসাল অামাদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে সর্বদাই স্বীকার করতেন যে তিনি মার্কসের শিষ্য এবং সেই হিসাবে 'ইস্তাহারের' ওপরই তাঁর ভিত্তি। কিন্তু ১৮৬২-৬৪ সালের প্রকাশ্য অান্দোলনে তিনি রাষ্ট্রের ক্রেডিটের সাহায্যে উৎপাদক সমবায়ের দাবির বেশি অগ্রসর হননি। কাছে। এই কর্মসূচী মার্কস রচনা করেছিলেন এই সকল দলের সন্তোষ বিধান করে; মিলিত কাজ ও পারস্পরিক আলোচনার ফলে শ্রমিকশ্রেণীর বুদ্ধিগত যে বিকাশ ছিল সুনিশ্চিত, তার উপরেই তিনি পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। পুঁজির সঙ্গে সংগ্রামের ঘটনা ও উত্থান-পতনে, জয়লাভের চাইতেও পরাজয়ে শ্রমিকদের এই জ্ঞানোদয় না হয়ে পারেনি যে তাদের সাধের নানা টোটকাগুলো (nostrums) অপর্যাপ্ত, শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির আসল শর্ত সম্বন্ধে পূর্ণতর অন্তর্দৃষ্টির পথ না কেটে পারেনি। মার্কস ঠিকই বুঝেছিলেন। ১৮৬৪ সালে আন্তর্জাতিক সৃষ্টির সময় শ্রমিকরা যে অবস্থায় ছিল তা থেকে একেবারে ভিন্ন মানুষ হয়ে তারা বেরিয়ে আসে ১৮৭৪ সালে আন্তর্জাতিক ভেঙে যাওয়ার সময়। ফ্রান্সে প্রুধোঁবাদ, জার্মানিতে লাসালপন্থা তখন মুমূর্ষু; এমনকি রক্ষণশীল ইংরেজ ট্রেড ইউনিয়নগুলোও, তাদের অধিকাংশ বহুদিন যাবৎ আন্তর্জাতিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকলেও, ধীরে ধীরে এতদূর পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে যে গত বছর সোয়ানসি শহরে তাদের সভাপতি তাদের নামেই ঘোষণা করতে পারলেন : 'ইউরোপীয় ভূখণ্ডের সমাজতন্ত্র আমাদের কাছে আর বিভীষিকা নেই'। বস্তুত, সকল দেশের মেহনতি মানুষের মধ্যে 'ইস্তাহার'-এর নীতিগুলো অনেক পরিমাণে ছড়িয়েছে।

তাই 'ইস্তাহার' আবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৮৫০ সালের পর তার মূল জার্মান পাঠ কয়েকবার পুনর্মুদ্রিত হয়েছে সুইরাজল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও আমেরিকাতে। ১৮৭২ সালে নিউ ইয়র্কে ইংরাজি অনুবাদ হয়েছিল, অনুবাদটি সেখানকার Woodhull and Claflin's Weekly-তে প্রকাশিত হয়। এই ইংরাজি অনুবাদ থেকে একটা ফরাসি অনুবাদ হয় নিউ ইয়র্কের Le Socialiste পত্রিকায়। এরপর কিছুটা বিকৃতি সহ অন্তত আরও দুটি ইংরাজি অনুবাদ আমেরিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে একটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছে ইংল্যান্ডে। প্রথম রুশ অনুবাদ বাকুনিনের করা, সেটি জেনেভা শহরে গের্ৎসেনের 'কলোকোল' অফিসে প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ আন্দাজ; দ্বিতীয় অনুবাদ করেন বীরনারী ভেরা জাসুলিচ, তা বের হয় ১৮৮২ সালে জেনেভাতেই। এক নতুন ডেনিশ সংস্করণ পাওয়া যাবে কোপেনহাগেনে ১৮৮৫ সালের Social-demokratisk Bibliothek-এ; নতুন এক ফরাসি অনুবাদ আছে প্যারিসে ১৮৮৫ সালের Le Socialiste পত্রিকায়। শেষেরটি অনুসরণে একটা স্পেনীয় অনুবাদ মাদ্রিদে ১৮৮৬ সালে প্রস্তুত ও প্রকাশিত হয়। জার্মান পুনর্মুদ্রণের সংখ্যা অসংখ্য, খুব কম করেও অন্তত বারো। কয়েক মাস আগে কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে একটা আর্মেনিয়ান অনুবাদের কথা ছিল, কিন্তু তা প্রকাশিত হয়নি শুনেছি এই জন্য যে প্রকাশক মার্কসের নামাঙ্কিত বই বের করতে সাহস পাননি আর অনুবাদক লেখাটা নিজের বলে প্রচার করতে গররাজি হন। অন্যান্য ভাষায় আরও অনুবাদের কথা আমি শুনেছি কিন্তু নিজের চোখে দেখিনি। সুতরাং 'ইস্তাহার'-এর ইতিহাস অনেকাংশে আধুনিক শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসই প্রতিফলিত করছে; আজকের দিনে সমগ্র সমাজতন্ত্রী সাহিত্যের সবচেয়ে প্রচারিত, সর্বাধিক আন্তর্জাতিক সাহিত্য-কীর্তি এইটেই; সাইবেরিয়া থেকে কালিফোর্নিয়া পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মেহনতি মানুষ একে মেনে নিয়েছেন নিজেদের সাধারণ কর্মসূচী হিসাবে।

কিন্তু লেখার সময়ে একে সমাজতন্ত্রী ইস্তাহার বলা সম্ভভ ছিল না। ১৮৪৭ সালে সমাজতন্ত্রী নামে বোঝাত একদিকে বিভিন্ন ইউটোপীয় মতবাদের অনুগামীদের : যেমন ইংল্যান্ডে ওয়েনপন্থী, ফ্রান্সে ফুরিয়েপন্থীরা, উভয়েই তখন সংকীর্ণ গোষ্ঠীর পর্যায়ে নেমে গিয়ে ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছিল; অন্যদিকে বোঝাত অতি বিচিত্র সব সামাজিক হাতুড়েদের, এরা নানাবিধ তুকতাকে পুঁজি ও মুনাফার কোনও ক্ষতি না করে সর্বপ্রকার সামাজিক অসন্তোষের প্রতিকার করার প্রতিশ্রুতি দিত। উভয় ক্ষেত্রের লোকেরাই ছিল শ্রমিক আন্দোলনের বাইরে, উভয়েরই চোখ ছিল 'শিক্ষিত' সম্প্রদায়ের সমর্থনের দিকেই। শ্রমিকশ্রেণীর যেটুকু অংশ নিতান্ত রাজনৈতিক বিপ্লবের অপর্যাপ্ততা বুঝেছিল, সমাজের সম্পূর্ণ বদলের প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করেছিল, সেই অংশ তখন নিজেদের কমিউনিস্ট নামে পরিচয় দিত। অবশ্য এ ছিল একটা কাঁচা, অমার্জিত, নিতান্তই সহজবোধের সাম্যবাদ; তবু এতে মূলকথাটা ধরা পড়েছিল এবং শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এর এতটা প্রভাব ছিল যে এ থেকে জন্ম নেয় ফ্রান্সে কাবে-র ও জার্মানিতে ভাইতলিং-এর ইউটোপীয় সাম্যবাদ। তাই ১৮৪৭ সালে সমাজতন্ত্র ছিল বুর্জোয়া আন্দোলন আর সাম্যবাদ শ্রমিকশ্রেণীর। অন্তত ইউরোপ মহাদেশে সমাজতন্ত্র ছিল 'সম্মানীয়'; আর সাম্যবাদ ছিল ঠিক তার বিপরীত। আর প্রথম থেকেই যেহেতু আমাদের ধারণা ছিল যে 'শ্রমিকশ্রেণীর মু্ক্তি হওয়া চাই শ্রমিকশ্রেণীরই নিজস্ব কাজ', তাই দুই নামের মধ্যে কোনটা আমরা নেব সে সম্বন্ধে কোনও সংশয় ছিল না। তাছাড়া আজ পর্যন্ত আমরা এ নাম বর্জন করার দিকেও যাইনি।

যদিও 'ইস্তাহার' আমাদের দুজনের রচনা, তবু আমার মনে হয় আমার বলা উচিত যে, এর মূলে রয়েছে যে প্রধান বক্তব্য সেটা মার্কসেরই নিজস্ব। সে বক্তব্য হল এই : ইতিহাসের প্রতি যুগে অর্থনৈতিক উৎপাদন ও বিনিময়ের প্রধান পদ্ধতি এবং তার আবশ্যিক ফল যে সামাজিক সংগঠন তা একটা ভিত্তি যার ওপর গড়ে ওঠে সে যুগের রাজনৈতিক ও মানসিক ইতিহাস এবং একমাত্র তা দিয়েই এ ইতিহাসের ব্যাখ্যা করা চলে; সুতরাং মানবজাতির সমগ্র ইতিহাস (জমির ওপর যৌথ মালিকানা সম্বলিত আদিম উপজাতীয় সমাজের অবসানের পর থেকে) হল শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস, শোষক ও শোষিত, শাসক এবং নিপীড়িত শ্রেণীর সংগ্রামের ইতিহাস; শ্রেণীসংগ্রামের এই ইতিহাস হল বিবর্তনের এক ধারা যা আজকের দিনে এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যেখানে একই সঙ্গে গোটা সমাজকে সকল শোষণ, নিপীড়ন, শ্রেণী-ভেদ ও শ্রেণীসংগ্রাম থেকে চিরদিনের মতো মুক্তি না দিয়ে শোষিত ও নিপীড়িত শ্রেণীটি – অর্থাৎ সর্বহারা – শোষক ও শাসকের, অর্থাৎ বুর্জোয়া শ্রেণীর কর্তৃত্বের কবল থকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না।

ডারউইনের মতবাদ জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যা করেছে, আমার মতে এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসের বেলায় তাই করতে বাধ্য। ১৮৪৫ সালের আগেকার কয়েক বছর ধরে আমরা দুজনেই ধীরে ধীরে এই সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে চলেছিলাম। স্বতন্ত্রভাবে আমি কতটা এদিকে অগ্রসর হয়েছিলাম তার সবচেয়ে ভালো নিদর্শন আমার 'ইংল্যান্ডে শ্রমিকশ্রেণীর অবস্থা' বইখানি। কিন্তু যখন ১৮৪৫ সালের বসন্তকালে ব্রাসেলস শহরে মার্কসের সঙ্গে আমার আবার দেখা হল, তখন মার্কস ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছেন। এখানে আমি যে ভাষায় মূলকথাটা উপস্থিত করলাম প্রায় তেমন পরিষ্কারভাবেই তিনি তখন তা আমার সামনে তুলে ধরেছিলেন।

১৮৭২ সালের জার্মান সংস্করণে আমাদের মিলিত ভূমিকা থেকে নিম্নলিখিত কথাগুলো উদ্ধৃত করছি :

'গত পঁচিশ বছরে বাস্তব অবস্থা যতই বদলে যাক না কেন, এই 'ইস্তাহার'-এ যে সব সাধারণ মূলনীতি নির্ধারিত হয়েছিল তা আজও মোটের ওপর ঠিক আগের মতোই সঠিক। এখানে ওখানে দু'একটি কথা আরও ভালো করে লেখা যেত। সর্বত্র এবং সবসময় মূলনীতিগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ নির্ভর করবে তখনকার ঐতিহাসিক অবস্থার ওপর, 'ইস্তাহার'-এর ভিতরেই সে কথা রয়েছে। সেইজন্য দ্বিতীয় অধ্যায়ের শেষে যেসব বিপ্লবী ব্যবস্থার প্রস্তাব আছে তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়নি। আজকের দিনে হলে এ অংশটা নানা দিক থেকে অন্যভাবে লিখতে হত। ১৮৪৮-এর পর থেকে আধুনিক যন্ত্রশিল্প যে বিপুল পদক্ষেপে এগিয়ে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকশ্রেণীর পার্টি সংগঠন উন্নত ও প্রসারিত হয়েছে, প্রথমে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবে, পরে আরও বেশি করে প্যারি কমিউনে, যেখানে সর্বহারা এই সর্বপ্রথম পুরো দুই মাস ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেছিল, তাতে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তার ফলে এই কর্মসূচী খুঁটিনাটি কিছু ব্যাপারে সেকেলে হয়ে পড়েছে। কমিউন বিশেষ করে একটা কথা প্রমাণ করেছে যে : “তৈরি রাষ্ট্রযন্ত্রটা শুধু দখলে পেয়েই শ্রমিকশ্রেণী তা নিজের কাজে লাগাতে পারে না”। ('ফ্রান্সে গৃহযুদ্ধ : আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মানুষের সমিতির সাধারণ পরিষদে বিবৃতি'; সেখানে কথাটা আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে)। তাছাড়া একথাও স্বতঃস্পষ্ট যে, সমাজতন্ত্রী সাহিত্যের সমালোচনাটি আজকের দিনের হিসাবে অসম্পূর্ণ, কারণ সে আলোচনার বিস্তার এখানে মাত্র ১৮৪৭ পর্যন্ত; তাছাড়া বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে কমিউনিস্টদের সম্পর্ক সম্বন্ধে বক্তব্যগুলোও (চতুর্থ অধ্যায়ে),সাধারণ মূলনীতির দিক থেকে ঠিক হলেও, ব্যবহারিক দিক থেকে সেকেলে হয়ে গেছে, কেননা রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে বদলে গেছে, এবং উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশকে ইতিহাসের অগ্রগতি এ জগৎ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়েছে।

'কিন্তু এই “ইস্তাহার” এখন ঐতিহাসিক দলিল হয়ে পড়েছে, একে বদলাবার কোনও অধিকার আমাদের আর নেই।'

মার্কস-এর 'পুঁজি' বইটির বেশিরভাগটার অনুবাদক, মিঃ স্যামুয়েল মুর এই অনুবাদ করেছেন। আমরা দুজনে মিলে এর সংশোধন করেছি; কয়েকটি ঐতিহাসিক উল্লেখের ব্যাখ্যা হিসাবে কিছু টীকা আমি সংযোজন করেছি।

ফ্রেডারিক এঙ্গেলস
লন্ডন, ৩০ জানুয়ারী ১৮৮৮