বুর্জোয়া সমাজের অস্তিত্বটা ক্রমাগত বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই বুর্জোয়া শ্রেণীর একাংশ সামাজিক অভাব-অভিয‍োগের প্রতিকার চায়।

এই অংশের মধ্যে পড়ে অর্থনীতিবিদরা, লোকহিতব্রতীরা, মানবতাবাদীরা, শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থার উন্নয়নকারীরা, দুঃস্থ-ত্রাণ সংগঠকরা, পশুক্লেশ নিবারণী সভার সদস্যরা, মাদকতা নিবারণের গোঁড়া প্রচারকরা,সম্ভবপর সব ধরনের খুচরো সংস্কারকরা। সমাজতন্ত্রের এই রূপটি পরিপূর্ণ মতধারা হিসাবেও পরিণতি লাভ করেছে।

এই রূপটার নিদর্শন হিসাবে আমরা প্রুধোঁর 'দারিদ্রের দর্শন'-এর উল্লেখ করতে পারি।

সমাজতান্ত্রিক বুর্জোয়ারা আধুনিক সামাজিক অবস্থার সুবিধাটা পুরোপুরি চায়, চায় না তার থেকে উদ্ভূত অবশ্যম্ভাবী সংগ্রাম ও বিপদটুকু। তারা সমাজের বর্তমান অবস্থা বজায় রাখতে চায়, কিন্তু তার বিপ্লবী ও ধ্বংসকারী উপাদানসমূহ বাদ দিয়ে। তারা চায় সর্বহারাবিহীন বুর্জোয়া শ্রেণী। যে দুনিয়ায় তারা সর্বেসর্বা, স্বভাবতই সেই দুনিয়াই তাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ। আশ্বস্তকর এই ভাবনাটাকেই বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র মোটামুটি পরিপূর্ণ নানাবিধ মতবাদে দাঁড় করায়। এরূপ মতবাদ কাজে পরিণত করে সর্বহারা সামাজিক নব জেরুজালেমে যাক, এই বলে এরা আসলে এটাই চায় যে শ্রমিকশ্রেণী বর্তমান সমাজের চৌহদ্দির ভিতরেই থাকুক, কিন্তু বুর্জোয়া সম্বন্ধে তার সমস্ত বিদ্বেষভাব বিসর্জন দিক।

এই ধরনের সমাজতন্ত্রের আর একটা অধিকতর ব্যবহারিক অথচ কম সুসংবদ্ধ রূপ আছে; তাতে প্রতিটি বিপ্লবী আন্দোলনকে শ্রমিকশ্রেণীর চোখে খাটো করে তোলা হয় এই বলে যে নিছক রাজনৈতিক কোনও সংস্কারে নয়, অস্তিত্বের বৈষয়িক অবস্থার, অর্থনৈতিক সম্পর্কের পরিবর্তনেই তাদের সুবিধা হতে পারে। অস্তিত্বের বৈষয়িক অবস্থার পরিবর্তন বলতে অবশ্য এই ধরনের সমাজতন্ত্র কোনোক্রমেই বুর্জোয়া উৎপাদন-সম্পর্কের উচ্ছেদ বোঝে না, যে উচ্ছেদ কেবল বিপ্লব দিয়েই সম্পন্ন হওয়া সম্ভব; বোঝে বুর্জোয়া উৎপাদন সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ভিত্তিতে শুধু শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। অর্থাৎ এহেন সংস্কার যা পুঁজি ও মজুরি-শ্রমের সম্পর্কটাকে কোনও দিক থেকেই আঘাত করে না, শুধু বড়জোর বুর্জোয়া সরকারের প্রশাসনের খরচ কমায় ও তাকে সরল করে অানে।

বুর্জোয়া সমাজতন্ত্রের সর্বোত্তম প্রকাশ শুধু তখন, যখন তা একটা বাক্যালঙ্কার মাত্র।

অবাধ বাণিজ্য : শ্রমিকশ্রেণীর উপকারের জন্য। সংরক্ষণ শুল্ক : শ্রমিকশ্রেণীরই উপকারের জন্য। কারাগারের সংস্কার : শ্রমিকশ্রেণীর উপকারের জন্য। বুর্জোয়া সমাজতন্ত্রের এই হল শেষ ও একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কথা।

সংক্ষেপে তা এই : বুর্জোয়ারা শ্রমিকশ্রেণীর উপকারের জন্যই বুর্জোয়া।