১। রায়ে উল্লেখ হয়েছে খুন করা হয়েছে ৮টি লোহার রড দিয়ে – তাই, এখান থেকে এটা বোঝাই যায এর পেছনে আটজন অভিযুক্ত রয়েছেন। অভিযুক্ত ঐ আটজন ব্যক্তির সঙ্গে আটখানা লোহার রডের সম্পর্কের কি প্রমাণ মেলে তা আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার্য বিষয় – যার সঙ্গে এই বিচারের পরিণতির কোনো সম্পকই নেই। আমরা দেখলাম, জর্জের রক্তের কোনো চিহ্ন রডগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। লোহার রডগুলোতে (যেটাকে খুনের অস্ত্র হিসাবে দেখানো হয়েছে) অভিযুক্তদের কোনো আঙ্গুলের ছাপেরও হদিশ মেলেনি। এদিকে, মামলায় বলা হয়েছে জর্জের শরীরে আটটি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে (যার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে আটখানা লোহার রড), কিন্তু যে ডাক্তার জর্জকে ভর্তি করিয়েছিলেন, তিনি জানান যে জর্জের শরীরে ছিল মাত্র একটি ক্ষত চিহ্ন, আর ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ছিল তিনটে ক্ষতচিহ্ন। সংখ্যাগতভাবে লোহার রড বা খুনের অস্ত্র হিসাবে সেগুলোকে ব্যবহার করা অথবা তার সঙ্গে আটজন 'খুনি' শ্রমিকের কোনো সম্পর্কের তথ্যপ্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি।
২। মামলাটি স্পষ্টতই নানা মিথ্যাচারে ভরা। এমনকি তাদের নিজস্ব সাক্ষীরাও তা অস্বীকার করে। এমন অকাট্য তথ্য পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে যে পুরো বিষয়টাই সাজানো। উদাহরণস্বরূপ, কয়েকজন অভিযুক্ত মামলা খারিজ করার লিখিত পাল্টা এক ডিসচার্জ পিটিশনে জানান যে, সিসি টিভি রেকর্ডিং শুধুমাত্র ঘটনা ঘটার সময় ও স্থানকেই দেখায়নি, বরং এমন কয়েকজন ব্যক্তির পরিচিতিকে উদ্ঘাটিত করেছে যাদের নাম ও কয়েকজনের খোলাখুলি কার্যকলাপ এফ আই আর-এ লেখা নেই। কিন্তু ঐ সিসি টিভির ফুটেজ যখন কোর্টে পেশ করা হল, তখন কিন্তু সেগুলোর আর দেখা মিলল না। মামলায় সাক্ষী-সাবুদের সাক্ষ্যপ্রমাণে এই সাধারণ দ্বন্দ্বকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিচারক আইও (ইনভেস্টিগেটিং অফিসার)-র বক্তব্যকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, যিনি বলেছেন যে ২১ সেপ্টেম্বর সিসি টিভি কাজ করেনি। বিচারকের অবশ্যই আইও-কে প্রশ্ন করা উচিত ছিল যে, যদি আইও জানতেন সিসি টিভি কাজ করেনি তবে তার আগে মামলায় লিখিতভাবে ঠিক তার উল্টোটাই কেন লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল? এখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই যে সত্যিটা বেরিয়ে আসে তা হল, সিটি টিভির ফুটেজটা সম্ভবত চেপে রাখা হয়েছিল কারণ তা এমন সব তথ্য উদ্ঘাটিত করত যা প্রিকল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের অস্বস্তিতে ফেলত। কিন্তু বিচারের সময় এই সমস্ত বিচার্য হল না। কেন?
৩। বলা হচ্ছে মানবোন্নয়নের সহ সভাপতির কামরায় ঘটনাটি ঘটে সকাল ১১.৪০ মিনিটে। যদিও আইও বলেছিলেন তিনি ঐদিন সকাল ১১.৪১ – ১১.৪৬ পর্যন্ত কামরার বাইরে ছিলেন। প্রিকলের মানবোন্নয়ন বিভাগের বা সশস্ত্র সংরক্ষিত পুলিশবাহিনী (যাদের এক বছরেরও আগে প্রিকলে নিয়োগ করা হয়) – এরা কেউই আইও-কে এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সম্পর্কে জানায়নি। একথাও তাকে জানায়নি যে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন ছিল। তিনি হলেন মামলার এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, যিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছেন যে খুন যেখানে সংগঠিত হয়েছিল, তিনি ঠিক তার বাইরে উপস্থিত ছিলেন – তা সত্ত্বেও তিনি নাকি কোনো খুনিকে পালাতেও দেখেননি। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনাও তার গোচরে আসেনি। এত কিছু সত্ত্বেও মামলায় তাকে বিরুদ্ধভাবাপূর্ণ সাক্ষী (হোস্টাইল ভিটনেস) হিসাবে ঘোষণা করা হল না। এছাড়া, প্রায় ১০০০-র বেশি শ্রমিক, শ'য়ে শ'য়ে অফিসার, ডাইরেক্টর বা আহত ব্যক্তি অথবা যারা চাক্ষুষ দেখেছেন – এমন কেউ পুলিশকে ফোনে বা থানায় (যার দূরত্ব বড়জোর দশ মিনিট হবে) খবর দিয়েছে – তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
৪। মামলায় সিসি টিভি ফুটেজের মিথ্যাসর্বস্ব ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিযুক্তদের আগেকার লিখিত ঘটনাগুলোর চেয়ে আইও-র বক্তব্যকেই বেশি নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছে। আইও-র বক্তব্যের ওপর বেশি নির্ভর করা মামলাটির রায় আইও-র অস্বস্তিকর ও স্ববিরোধী বক্তব্যগুলোকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি। রায়দানের সময় শুধু এটা বলা হয়েছে যে মামলা চলাকালীন আইও-র উল্টো সাক্ষ্যদান ''দুর্ভাগ্যজনক'' ছিল।
৫। বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মামলায় বলা হয়েছে, আহতদের ধাপে ধাপে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে (যে আহত ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে যুঝছিলেন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দুপুর ১.২২ মিনিটে, আর বাকিরা ভর্তি হয়েছিল দুপুর ২.৩০, ৩.০০ ও ৩.৩০ (এর মধ্যে)। কিন্তু যে নার্স আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যান, তিনি জানান যে তিনিই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সেখানে ১৫ মিনিট থাকার পর ঐ একই অ্যাম্বুলেন্সে কারখানায় ফিরে আসেন। অ্যাম্বুলেন্সের রেজিস্টারে লেখা রয়েছে যে কারখানা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি আহতদের নিয়ে ১১.৫০ মিনিটে যায় এবং ফিরে আসে দুপুর ১টায়। মামলায় বিলম্বকে ব্যাখ্যা করার সমস্ত প্রচেষ্টাকেই উক্ত বক্তব্য খারিজ করে।
একজন ফুটপাথবাসীকে সলমন খান গাড়ির নীচে পিষে মারার পর বা দলিত গণহত্যার খুনিরা যখন ছাড়া পায়, তখন দেখা বলা হয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যদান অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার জন্য 'যথেষ্ট' নয়, এটাও বলা হল 'কাউকে' দোষী হিসাবে সাব্যস্ত করতে কোনো ধরনের চাপ ছিল না। কিন্তু শ্রমিক ও ইউনিয়ন কর্মীদের অভিযুক্ত করার এরকম এক ঘটনায় কোনো একটি মৃত্যু খুন হিসাবে যদি প্রমাণিত না হয়, যদি খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র বা খুনিদের প্রমাণ না মেলে, আর মামলায় বেশিরভাগ শুনানির ক্ষেত্রে যদি তাদের নিজস্ব সাক্ষী বা প্রমাণ না মেলে, তবে তাতে কি যায় আসে?