কোয়েম্বাত্তুর ইউনিটে বেশিরভাগ শ্রমিকরা ২০০৭ সালের গোড়ায় এ আই সি সি টি ইউ অনুমোদিত দুটি ইউনিয়ন গঠন করেন। তখন কর্তৃপক্ষ ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দিতে বা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করতে রাজি হয়নি। বরং এই বলে শ্রমিকদের হুমকি দেয় যে নতুন ইউনিয়নের সংসর্গ ত্যাগ না করলে তারা কোয়েম্বাত্তুর ছেড়ে চলে যাবে।

শ্রমিকদের লং-মার্চ –

শ্রমিকদের নানান দাবিকে জনপ্রিয় করতে প্রিকলে শ্রমিকরা তামিলনাড়ুতে রাজ্যস্তরে দুটি লং-মার্চ করেন। মূল দাবিগুলো ছিল – ন্যূনতম মজুরি হিসাবে মাসিক ২০ হাজার টাকা, আবাসনের অধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদের ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দান, এল এ বিল ৪৭/২০০৮ মারফৎ অ্যাপ্রেন্টিসদের অধিকার আর এ প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তি জারি।

সর্বভারতীয় ধর্মঘট সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রিকল শ্রমিকরা নেতৃত্বকারী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতি এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায় করে –

খুনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকরা দৃঢ়ভাবে নিজেদের ঐক্য বজায় রাখেন। ফলে ২০১১ সালে কর্তৃপক্ষ ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে কর্তৃপক্ষ দু-দুটো মজুরি সংক্রান্ত চুক্তি করতে বাধ্য হয়, যার ফলে গ্রেড ৫-এ দীর্ঘ ২৫ বছর কর্মরত একজন শ্রমিক, যিনি ২০০৭ সালে (ইউনিয়ন স্বীকৃতি পাওয়ার আগে) বেতন পেতেন ৮৫৯৩ টাকা, ২০১৫ সালে (ইউনিয়ন স্বীকৃতি পাওয়ার পর) বেতন পাবেন মোট ২৪,৪২৭ টাকা। ইউনিয়ন স্বীকৃতি পাওয়ার আগে ২৫ বছর কর্মরত একজন শ্রমিক আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিয়ে পেতেন ১.২৫ লাখ টাকা। আর ২০১৫ সালে (স্বীকৃতি পাওয়ার পর) পাচ্ছেন ৩.৫৫ লাখ টাকা।

অতীতে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার বিষয়টা কর্তৃপক্ষ একতরফা ও যথেচ্ছভাবে চাপিয়ে দিত শ্রমিকদের ওপর। আর এখন গত দুটো চুক্তির সময়ে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়টা যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে ঠিক হয়।

শ্রমশক্তি সংকোচনের বর্তমান সময়ে তাঁরা সফলতার সঙ্গে ২৩০ জন শ্রমিকের চাকরি নিশ্চিত করে, আর এমন ৫০০ জন শ্রমিকের বিষয়গুলো সমাধান করেন যারা কর্তৃপক্ষের কাছে ছিলেন নেহাতই অপরিচিত।

২০০৭ সালে প্রিকলের মহিলা শ্রমিকরা ধর্মঘটের সময়ে ১৭ ঘণ্টা ব্যাপী রাস্তা রোকো সংগঠিত করেন এবং একটা সময়ে কারখানাকে ঘেরাও করতে ও পুলিশী ব্যারিকেড ভাঙ্গতে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে উৎপীড়নের বিরুদ্ধে

ইউনিয়নকে ভাঙ্গার এবং শ্রমিকদের মনোবলে চিড় ধরাবার সমস্ত সম্ভাব্য কৌশল নেওয়া হয়েছিল। যেমন --

১। পুলিশ মারফত শ্রমিকদের ওপর মিথ্যা মামলা চাপানো হয়।

২। শাস্তি হিসাবে কোম্পানি বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন কর্মীকে উত্তরাখণ্ড ইউনিটে বদলি করে দেয়।

৩। ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হয়, মজুরি বৃদ্ধি থেকে তাঁদের নিয়মিত মজুরি ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৪। বেশ কিছু শ্রমিককে নামিয়ে দেওয়া হয় নীচুমানের কাজে।

৫। লক-আউট করে দেওয়া হয় কোম্পানির একটা অংশ।

৬। বেশ কিছু শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়।

৭। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জানায় যে যদি তাঁরা ঐ সমস্ত সংগ্রামী ইউনিয়নগুলোকে পরিত্যাগ করে তবে সব কিছুই তাঁরা ফিরে পাবেন, সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।

তা সত্ত্বেও শ্রমিকরা প্রশাসন-কর্তৃপক্ষ-পুলিশ জোটের বিরুদ্ধে রাস্তায় ও আদালত চত্বরের মধ্যে তাঁদের লড়াই জারি রাখেন এবং ঐক্য ও সংগ্রামী চেতনার ভিত্তিতে তাঁরা কারখানার ভেতরে ও বাইরে সংগ্রাম বিস্তৃত করেন  এতটাই তীব্রভাবে যে শিল্প-বিরোধ আইনের ১০(১), ১০(৩) এবং ১০বি ধারা অনুযায়ী তামিলনাড়ু সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রিকলের শ্রমিকরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে অনেকগুলো জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষের সমস্ত কৌশল ও মিথ্যাচার ব্যর্থ হওয়ার পর পুলিশ ও প্রশাসন শ্রমিকদের দমাতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মতো অত্যন্ত গুরুতর ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে শ্রমিকদের  জেলে ভরে দিল।