বিমুদ্রাকরণের ফলে সন্ত্রাসবাদীদের টাকার যোগানের উৎস চূর্ণ হবে অথবা কাশ্মীরে যারা পাথর ছুঁড়ছে সন্ত্রাসবাদীরা তাদের ৫০০ টাকা করে দিতে না পারায় কাশ্মীরে পাথর ছোঁড়া বন্ধ হবে -- এই দাবি সম্পর্কে কি বলা যাবে?

ভালো কথা, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ দাবি করেছে যে, সন্ত্রাসবাদীদের কাছে নতুন ২০০০ টাকার নোট পাওয়া গেছে! আসল ঘটনা হল --

  • কাশ্মীরের মানুষ পাথর ছোঁড়েন কারণ তারা ক্রুদ্ধ – তাদের টাকা দেওয়া হয় বলে নয়। কাশ্মীরের প্রতিটি মানুষকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে যদি তাদের মন এবং হৃদয় এবং কাশ্মীর সমস্যার সমাধানকে কেনা যেত, তবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানও কি এত দিনে হয়ে যেত না?

  • নোট বাতিলের ফলে কাশ্মীরে পাথর ছোঁড়া বন্ধ হবে, এই দাবিকে নিয়ে চালু একটা রসিকতা হল, নোট বাতিলের পদক্ষেপ বস্তুত অন্যান্য রাজ্যের ভারতীয়দেরও পাথর ছুঁড়তে প্ররোচিত করেছে ! লাইনে দাঁড়ানো ক্রুদ্ধ জনতা পশ্চিমবাংলার মালদহ এবং উত্তরপ্রদেশের বুলান্দশহরে ব্যাঙ্ক এবং এটিএম-গুলোর দিকে পাথর ছুঁড়েছে।

নোট বন্দী নিয়ে বিজেপির ভোল পাল্টানো

মোদী বলছেন যে, ইন্দিরা গান্ধী এবং পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারগুলো বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে 'যথেষ্ট সাহসী' ছিল না। এটা কিন্তু সজ্ঞানে অসত্য বলা -- বস্তুত, ইউপিএ জমানায় আরবিআই যখন আংশিক বিমুদ্রাকরণ চালু করে বিজেপি নিজেই তখন বিমুদ্রাকরণকে 'দরিদ্র-বিরোধী' বলে অভিহিত করেছিল!

২০১৪ সালে আরবিআই যখন ঘোষণা করে যে, ২০০৫ সালের আগে ছাপা নোট তুলে নেওয়া হবে, বিজেপি তখন ঐ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছিল – যদিও ঐ পদক্ষেপ বিজেপি সরকার সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার ধারেকাছেও যায়নি।

বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষি লেখি তখন বলেছিলেন :

“যাদের কালো টাকা আছে, যারা শহরে থাকে, বা যাদের উপায় আছে, তারা পুরনো নোটের বদলে নতুন নোট পেয়ে যাবে। কিন্তু দরিদ্রদের, আম আওরত ও আদমিদের, কিংবা যে মহিলা তার স্বামীর টাকা থেকে কিছু সঞ্চয় করে সেটাকে আটার ডাব্বায় রেখেছেন অথবা ডাল কিংবা চালের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন, তাদের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"

লেখি আরও বলেন, যারা তাদের সঞ্চয় মার্কিন ডলার বা অন্যান্য বিদেশী মুদ্রায় রাখে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু যারা তাদের সঞ্চয় নগদ টাকায় রাখে তারা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি ঘোষণা করেন, ঐ পদক্ষেপ ছিল "দরিদ্র জনগণের ওপর এক অন্যায্য আক্রমণ" এবং তিনি দাবি করলেন, “কত সংখ্যক নোট বাতিল হবে, এর মধ্যে কত সংখ্যক গ্রামীণ ভারতে, সে সম্পর্কে আরবিআই-কে একটা বিবৃতি দিতে হবে, এবং দরিদ্রদের ওপর এর প্রতিক্রিয়া কি হবে তার একটা মূল্যায়ন করতে হবে। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া কি হবে সে সম্পর্কে আরবিআই-কে একটা পরিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।"

ইউপিএ সরকার আংশিক বিমুদ্রাকরণ করলে সেটা 'দরিদ্র-বিরোধী', আর প্রকট দীর্ঘস্থায়ী বিশৃঙ্খলা এবং দুর্দশা সৃষ্টিকারী ব্যাপক, অতর্কিত, গোপন বিমুদ্রাকরণ 'দরিদ্র-মুখী', এমনটা হয় কি করে? বিমুদ্রাকরণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে "পরিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করতে" বিজেপি কি সম্মত হবে, অথবা অক্লেশে দাবি করবে যে, মোদীর অ্যাপ সমীক্ষার প্রহসনময় এবং পক্ষপাতপূর্ণ ফলাফল আমরা মেনে নিই?