স্মরণ করুন, কিভাবে মাল্যর মতো ঠগেরা ভারতের ব্যাঙ্কগুলোকে লুট করে এবং ঋণ পরিশোধ না করে চম্পট দেয়। এইভাবে ধনী ঋণখেলাপিরা ব্যাঙ্ক থেকে যা লুট করে তার মোট পরিমাণ ১১ লক্ষ কোটি টাকা। এই হিসাবটা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হলে স্মরণ করুন যে ২-জি কেলেঙ্কারি ছিল ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকার, যা ব্যাঙ্কগুলো থেকে লুট হওয়া মোট পরিমাণের এক ক্ষুদ্র অংশ। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ কিভাবে আদায় হবে?

যদি একজন সাধারণ কৃষক ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন – সেক্ষেত্রে তাঁকে যেভাবেই হোক ঋণের টাকা শোধ করতে হবে, এতে যদি তাদের জমি বিক্রি করতে হয় তো তা করতে হবে। আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ কৃষক ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন। সরকার কৃষকদের ঋণ মকুব করেনি। কিন্তু সরকার দেশের বড় বড় ধনীদের বিপুল পরিমাণ ব্যাঙ্ক-ঋণ কার্যত মকুব করে দিচ্ছে।

সরকার এই সমস্ত ঋণ খেলাপিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে মোটেই ইচ্ছুক নয়, এমনকি তাদের আর‍ও ঋণ নেওয়া আটকাতে কালো তালিকাভুক্ত করতেও রাজি নয়। বিপরীতে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এসবিআই বিজয় মাল্যের কিংফিশার এয়ারলাইনস সহ ঋণখেলাপি তালিকার উপর দিকে থাকা ৬৩ জনের মোট ৭০০০ কোটি টাকার ঋণ ব্যঙ্কের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে। গ্রেট ব্রিটেনে মাল্য অনেকগুলো বাড়ির মালিক এবং সরকারী সহায়তায় দেশ থেকে পালিয়ে তিনি সেখানে আজও বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। একইভাবে ২০১৫ সালে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্যাস-এর বিপুল পরিমাণ ঋণকে 'পুনর্বিন্যস্ত' করা হয়; এখন ২০১৯ সালের পরিবর্তে আম্বানি ২০৩১ সালের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন!

বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের কারণে ব্যাঙ্কগুলো মারাত্মকভাবে নগদ টাকার অভাবে পড়ে। ব্যাঙ্কগুলোকে টাকা জোগাতে সরকার ঋণ পরিশোধ না করা ধনীদের পরিশোধ করতে বাধ্য করার বদলে গরিবদের সঞ্চয়কে শুষে ব্যাঙ্কে নিয়ে আসার জন্য নোট বাতিল পদক্ষেপকে ব্যবহার করছে এবং নিজেদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়কে যাতে গরিবরা খুব অল্প অল্প করেই ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারেন সেজন্য নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। গরিবরা ব্যাঙ্কের সামনে দিনের পর দিন লাইন দিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেছন। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলো এখন সাধারণ মানুষের এই সঞ্চয়কে আবার ধনী ও দুর্নীতিগ্রস্তদের হাতে সস্তা ঋণ হিসাবে তুলে দিতে পারবে!

সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে নোট বাতিলের ফলে "বাড়িতে পড়ে থাকা পারিবারিক সঞ্চয়কে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় টেনে আনা গেছে এবং তা কম সুদে ঋণ দিতে ব্যাঙ্কগুলোকে সক্ষম করে তুলবে।" দাস মহাশয়ের জানা দরকার যে গরিবদের সঞ্চয় 'অকেজোভাবে বাড়িতে পরে থাকে না' -- দৈনন্দিন ভিত্তিতে পরিবারের ভরণপোষণ চালাতেই এই টাকা তাদের প্রয়োজন। এখন এই সঞ্চয় ব্যাঙ্কের হাতে জমা পড়েছে, ধনীদের সস্তায় ঋণ দিতে এটা আপনাদের প্রয়োজন। আপনাদের সরকারের সাহায্যে গরিবদের ঘাম ও রক্ত ঝরানো সঞ্চয় ধনী ও দুর্নীতিগ্রস্তরা নিজেদের লাভের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লুট করবে।