(লিবারেশ, জুলাই ১৯৯৭ থেকে সংক্ষেপিত)

রাজ্যপাল সিবিআই-কে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশীট পেশের অনুমতি প্রদানের পর লালু যাদব বিহার শাসনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। ঐ অনুমতি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো ও ব্যাপক-ভিত্তিক হয়েছে – বামেদের সমগ্র অংশ এবং জনতা দলেরও একটি অংশ একই দাবি করে আসছে। সমস্ত দিক থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে তাঁর পতনের সূচনা হয়ে গেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে বামেদের অবস্থানগুলি পর্যালোচনা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এই সেদিন বিহারের এক বিশিষ্ট বাম তাত্ত্বিক টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় তাঁর এক লেখায় লালু সম্পর্কে বামেদের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করতে গিয়ে হ্যামলেটের দ্বন্দ্বের বিখ্যাত অভিব্যক্তি ‘টু বি অর নট টু বি’ (এটাও হতে পারে, ওটাও হতে পারে) স্মরণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, লালু যাদবকে বিশ্বাস করে বামেরা যদি এর আগে ভুল করে থাকেন, তবে লালু-বিরোধী জেহাদকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেলে তারা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন। তার কারণ লালুর প্রতি জনগণের এক ভালো অংশের সমর্থন এখনও অটুট এবং ঘোলা জলে মাছ ধরতে বিজেপি প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। বামেদের এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তাঁর লেখা শেষ হয়েছে এই সংশয় প্রকাশের মধ্যে যে লালুর পতনে কে লাভবান হবে এবং এই ধাঁধার কোনো সমাধান তিনি দিতে পারেননি।

বাম বলতে তিনি তাঁর নিজস্ব ক্ষুদ্ধ গোষ্ঠী সহ সরকারি বামপন্থীদের বুঝিয়েছেন, যারা সেই প্রবাদের ‘রাজার প্রতি সবচেয়ে বেশি অনুগত’ ভঙ্গিতে এতদিন লালুর লেজুড়বৃত্তি করে এসেছেন।

সিপিআই(এমএল)-এর কোনো উল্লেখই যে তিনি করেননি, তার কারণ সহজবোধ্য। এটা স্বীকার করা তাঁর পক্ষে খুবই অস্বস্তিকর হত যে, লালুর সাত বছরের রাজত্বের একেবারে শুরু থেকেই সিপিআই(এমএল) কোনো বুর্জোয়া নেতার প্রতি আস্থা স্থাপনের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এসেছে, এই তথাকথিত মণ্ডলপন্থী ত্রাণকর্তার স্বরূপ উন্মোচনের অভিযান পরিচালনা করেছে এবং নিজের স্বাধীন কর্মধারা নির্ধারণ করে লালুর অপশাসনের বিরুদ্ধে এক জনপ্রিয় আন্দোলন পরিচালনা করেছে। তা করতে গিয়ে সিপিআই(এমএল), যে সরকারি বামপন্থীরা লালুর ভাবমূর্তিতে বিমোহিত হয়ে পড়েছিলেন, তাদের রোষের শিকার হয়েছে। সিপিআই(এমএল)-কে প্রগতির গতিধারার প্রতিহতকারী হিসাবে মণ্ডল-বিরোধী ছাপ মারা হয়েছে, এমনকি এই অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে যে এক সামাজিক ন্যায়ের রাজত্বের পতন ঘটাতে চেয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করছে। খবু কম লোকই এটা জানে যে সমগ্র বাম বিন্যাসের মধ্যে অতিবাম ধারাও সিপিআই(এমএল)-কে মোটামুটি একইভাবে সমালোচনা করেছিল। সরকারি কমিউনিস্ট এবং সরকারি নৈরাজ্যবাদী – উভয়েই পরিণতি হিসাবে লালু যাদবের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং লালু যাদবও সিপিআই(এমএল)-কে কুৎসা করতে এবং এমনকি তার ক্যাডারদের নিঃশেষ করতে তাদের পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে।

কিন্তু ইতিহাসের আস্তিনে লুকানো ছিল অন্য এক ছক। আজ চক্রের আবর্তন সম্পূর্ণ হওয়ার পর ‘দরিদ্র জনসাধারণের ঐ ত্রাণকর্তা’ যিনি তাঁর গ্রাম্য ভঙ্গিতে দেশের মানুষের মনোরঞ্জন করেছিলেন এবং যিনি নিজেকে রাজা ঠিক করার নায়ক হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি নিজেই আজ কেলেঙ্কারির নায়কদের মধ্যমণি হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছেন। তাঁর একমাত্র কাজ ছিল সরকারি তহবিল লুণ্ঠন করে নিজের আখের গোছানো এবং তাঁর শাগরেদদের সন্তুষ্ট রাখা। যে সমস্ত বাম মুখপাত্র এবং সাংবাদিক লালুর ভাবমূর্তিতে ঔজ্জ্বল্যের প্রলেপ দিয়েছিলেন, তারা আজ সে ব্যাপারে নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলতে এবং লালুর দ্বারা তাঁরা যে প্রতারিত হয়েছিলেন সেকথা গোপন করতে দেখাতে চাইছেন যে লালুর অধঃপতন হয়েছে অনেক দেরীতে, যখন তিনি প্রতিপত্তিশালী এবং উদ্ধত হয়ে ওঠেন। এটি একেবারে নির্জলা মিথ্যাচার। তথ্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে, বিরোধী দলনেতা থাকার সময়ই তিনি পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই পুরোমাত্রায় ঐ কাজে নেমে পড়েন। তাঁর জনমোহিনী প্রদর্শনী ছিল অপরাধমূলক কাজকর্মকে চাপা দেওয়ার আবরণ মাত্র।

তাঁর সামন্ত-বিরোধী পরিচিতিও ছিল মেকি। এটি প্রকাশ পায় পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ৫৬ জনকে নিয়ে গঠিত তাঁর চক্রের গঠন বিন্যাসের মধ্যে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চবর্ণের সামন্তস্বার্থের প্রতিভূ কুখ্যাত মাতব্বরদেরও নাম। তাঁর ঘোষিত কর্মসূচি ছিল বিহারের রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর উচ্চবর্ণের সামন্ততান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করা ও বিজেপিকে রোখা। কিন্তু তাঁর গোপন কর্মসূচি ছিল পশ্চাদপদ ও উচ্চবর্ণের জাতিগুলির অভিজাতদের মধ্যে ক্ষমতার এক ভারসাম্য সৃষ্টি করা এবং বিহারের ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী বাম আন্দোলনকে রোখা। ভারতীয় শাসকশ্রেণীর বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিনিধিরা এই গোপন কর্মসূচি সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত ছিলেন আর তাই বিহারের বিস্ফোরক বিপ্লবী পরিস্থিতিতে এক বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে তাঁরা তাঁকে সমর্থন করেছিলেন।

অবশ্য, পশ্চাদপদ জাতিগুলিকে তাঁর কব্জায় ধরে রাখতে লালু যাদব ব্যর্থ হন এবং সমতা পার্টির রূপে যে ভাঙ্গন ঘটে তা বিজেপিকে উচ্চবর্ণ ও পশ্চাদপদ জাতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের এক বিকল্প ভিত্তি হাজির করার সুযোগ এনে দেয়। অপরদিকে সিপিআই(এমএল) লালুর হুমকি ও উৎকোচের নীতির কাছে নতিস্বীকার করতে অস্বীকার করে এবং গ্রামীণ দরিদ্র ও দলিতদের সামাজিক স্তরকে সমাবেশিত করার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাদের ওপর লালুর প্রভাব যথেষ্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিহারে সিপিআই(এমএল)-এর ইতিহাসে এই পর্বটি ছিল সর্বাপেক্ষা রক্তক্ষয়ী পর্ব, যখন পার্টিকে ভোজপুরে উচ্চবর্ণের সামন্ততান্ত্রিক রোষের বিরুদ্ধে, সিওয়ানে উচ্চবর্ণ ও পশ্চাদপদদের শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলির সম্মিলিত হত্যালীলার বিরুদ্ধে এবং মধ্য ও দক্ষিণ বিহারের কিছু অংশে এমসিসি-পার্টি ইউনিটির তীব্র আক্রমণের মোকাবিলা করতে হয়। এ সবগুলিতেই অব্যাহত মদত জোগায় লালু প্রশাসন। তবুও পার্টি তার অবস্থানে অবিচল থাকে এবং লালু রাজত্বের বিরুদ্ধে গ্রামীণ দরিদ্রদের জনপ্রিয় সমাবেশ ঘটানোর কোনো সুযোগকেই হাতছাড়া করেনি। আমাদের পার্টিই কেলেঙ্গারি-কলঙ্কিত রাজের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জনসমাবেশ ঘটিয়েছে এবং বিরোধী পক্ষের কোনো দলই তার সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি।

সাত বছর রাজত্বের পর লালুর নিজের সামাজিক ভিত্তি এবং রাজনৈতিক কূটচালের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি তাঁর বাম মিত্রদেরও প্রান্তিক করে তুলেছেন ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার ধ্বংসাধন করেছেন, যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা বিজেপির বৃদ্ধিকে আটকানোর ব্যাপারে অন্ততপক্ষে এক বাড়তি শক্তির ভূমিকা পালন করত। অন্যদিকে বিজেপি তার প্রতিপত্তি বাড়িয়েছে এবং সিপিআই(এমএল)ও মূলধারার বাম হিসাবে সামনে এসেছে। তাঁর নিজের গোপন কর্মসূচিকে যুক্তিযুক্ত পরিণতি দিতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়াই শাসকশ্রেণীর মতলবের কাছে লালুর অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার একমাত্র কারণ। এবং লালু যা দাবি করেন ও উপরোক্ত বাম তাত্ত্বিকও যার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে তাঁর তথাকথিত জেহাদ – তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কারণ – এটি কোনোক্রমেই ঠিক নয়।

লালু খুব উঁচুদরের বাক্যবাগীশ। বামেদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বলা যায়, তাঁর এক বিখ্যাত মন্তব্যে তিনি বামেদের বিপথগামী বলে বর্ণনা করেন এবং তাঁর বাম মিত্রদের ও লাল পতাকাকে প্রকাশ্যে অপমানিত করার কোনো সুযোগই তিনি ছাড়েননি। তবুও ‘বামরা’ যদি এখনও তাঁর প্রতি সমস্ত ধরনের মোহ পোষণ করেন এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখেন তাবে তা মূলত ঘটছে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য ঐ ধরনের শক্তির ওপর নির্ভর করার ভুল কৌশলগত উপলব্ধি থেকে।

পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে সিবিআই লালু যাদবের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়ার ফলে উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতি এক নতুন রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের জন্ম দিয়েছে এবং এই লক্ষ্যেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলাম। আমাদের উদ্যোগে এবং লালুর পদত্যাগের দাবিতে ১৫টি বাম ও গণতান্ত্রিক দলের ঢিলেঢালা এক জোট সামনে এসেছে। যদিও সিপিআই এবং অন্যান্যদের কেউ কেউ এই জোটে যোগ দিতে বাধ্য হয়, কিন্তু তাঁদের লক্ষ্য লালুর পদত্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং তাঁরা উদ্ভূত নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতার সুবাদে দরকষাকষিতে বেশি সুবিধা আদায় করে পুরোনো পরিবারেই ফিরে যাবার আশা পোষণ করে। আর তাই তাঁরা এই জোটে দায়সারাভাবে অংশগ্রহণ করছেন এবং জোটের সংহতকরণকে ঠেকাতে কিছু শরিককে সঙ্গে নিয়ে গোপন ও সন্দেহজনক সমান্তরাল উদ্যোগ সহ সমস্ত ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এই জোট অতএব খুবই ভঙ্গুর এবং অস্থায়ী প্রকৃতির।

তবুও এই জোটের উদ্ভব যাঁরা লালু রাজত্বের এক বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্পের সন্ধান করছিলেন, সেই জনগণের মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা জাগিয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার বনধের আহ্বানে তাদের স্বতস্ফূর্ত ও ব্যাপক সমর্থনের মধ্যে এটি পরিলক্ষিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের বন্ধ থেকে সিপিআই সরকারিভাবে নিজেকে সরিয়ে নেয় এবং প্রকৃতপক্ষে বনধ সফল করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তায় সিপিআই(এমএল)-এর কাঁধে। এ সত্ত্বেও বন্ধ চূড়ান্তভাবে সফল হয়। বাস্তব পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নেওয়ার সাহস যদি সিপিআই দেখাত এবং কার্যত সিপিআই(এমএল)-ই যে বিহারে সবথেকে বড় বাম দল হিসাবে উঠে এসেছে তা স্বীকার করে নিত – তাহলে জোটের বেশিরভাগ শরিকই যে ধারণা পোষণ করে থাকে – ঐ জোট বিহার রাজনীতিতে বিজেপির শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারত। পরিস্থিতির চাপে আমাদের সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য হলেও তারা বাস্তবকে মেনে নিতে পারেনি। সংবাদপত্রের বিশ্লেষকরা যখন লিখলেন যে সাত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মতাদর্শগত সংগ্রাম চালিয়ে সিপিআই(এমএল)-ই সবথেকে এগিয়ে গেছে, তখন সিপিআই তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

সে যাই হোক না কেন, আন্দোলনের সমগ্র প্রক্রিয়া সিপিআই(এমএল)-এর নৈতিক কর্তৃত্ব ও মতাদর্শগত উৎকর্ষকেই সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেই সঙ্গে স্বাধীনভাবে ব্যাপকমাত্রায় জনসমাবেশ সংগঠিত করা, বিভিন্ন ধরনের শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে সিপিআই(এমএল)-এর সামর্থ্য বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসা অর্জন করেছে।

লালু যাদবের সমর্থনে প্রকাশ্যে এগিয়ে আসায় এমসিসি-র মহাবিপ্লবীরা উন্মোচিত হয়ে গেছেন। জীবন্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে পার্টি ইউনিটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিল সন্ধিক্ষণই এই ধরনের গোষ্ঠীগুলির মূলগতভাবে অরাজনৈতিক, নৈরাজ্যবাদী চরিত্র প্রমাণ করে দেয়।

বিহারের পরিস্থিতি অবশ্যই আমাদের অনুকূলে ঘুরেছে। লালুর জমানা শেষ হয়ে আসছে এবং সিপিআই(এমএল)-এর রাজনৈতিক প্রভাব সারা বিহার জুড়েই বিস্তারলাভ করেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীগুলিও আশায় আমাদের দিকে তাকাতে শুরু করেছে। কিন্তু রাস্তা এখনও যথেষ্টই আঁকাবাঁকা।

লালু বিরোধী আন্দোলনে নিজেদের হাতে উদ্যোগ রেখে কে অপরকে ছাপিয়ে যাবে, এই ব্যাপারে বিজেপি ও সিপিআই(এমএল)-এর মধ্যে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। এক প্রধান জাতীয় পার্টি এবং শাসকশ্রেণীর প্রিয়পাত্র হওয়ায় বিজেপি অবশ্যই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তাঁদের ছোটোখাটো উদ্যোগও সংবাদপত্র ও টিভি-তে সারা দেশে ঢালাও প্রচার পেয়ে থাকে। অপরদিকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলিও প্রচারের আলো দেখে না। সমতা দলের মধ্যে তাঁরা এক দৃঢ় মিত্রকে পেয়েছেন আর আমাদের মিত্র সিপিআই আমাদের পিছন থেকে ছুরি মারতেই বেশি আগ্রহী। এ সত্ত্বেও আমরা প্রতিটি পদেই বিজেপির সাথে পাঞ্জা কষে চলার চেষ্টা করেছি এবং ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ তাদের পিছনে ফেলে দিয়েছে। আদবানির রথ বিহারে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি উদ্যোগ ফিরে পাওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং আমরা জনগণের কাছে ঐ যাত্রা বয়কট করার আহ্বান রেখেছি। লালুর পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে নতুন পর্যায়ের এক সংঘাত অবশ্যম্ভাবী এবং এই সাম্প্রদায়িক বিপদের মোকাবিলায় পার্টিকে তার ভূমিকা বাড়িয়ে তুলতে হবে।

লালুকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য আন্দোলন বিহারে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ১৫ দলের জোটকে সংহত করার জন্য এবং ঐ জোটে এক কর্মসূচিগত দিশা প্রদানের জন্য পার্টি যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ক্ষমতায় আসন্ন নতুন শক্তির সাপেক্ষে এক বিরোধী জোট হিসাবে আমরা এই জোট রেখে দিতে চাই। কিন্তু তা সরকারি বামেদের ‘থাকব, না বিদায় নেব’ এই দ্বিধাগ্রস্ততার বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম চালানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বাধীন উদ্যোগকে শক্তিশালী করে তোলারও দাবি করে। নতুন পরিস্থিতিতে বামেদের যদি উদ্যোগ ধরে রাখতে হয় তবে তাদের মেকি সামাজিক ন্যায় এবং মেকি জাতীয়দতাবাদ – উভয়েরই মোকাবিলা করতে হবে।