(ষষ্ঠ পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট থেকে)

ভোজপুরে আজ তিন বছর ধরে রণবীর সেনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে। সব মিলিয়ে রণবীর সেনা ১৬২ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ৪ জন স্থানীয় স্কোয়াড কমাণ্ডার ও ৮ জন স্থানীয় সক্রিয় কর্মী সহ আমাদের ২০ জন পার্টি সভ্য রয়েছেন, ১৫ থেকে ২০ জন ছিলেন জনতা দল বা সমতা পার্টির সাথে যুক্ত এবং এর মধ্যে বড় সংখ্যকই রাজনীতিগতভাবে নিরপেক্ষ মানুষ, যারা নিহত হয়েছেন কেবলমাত্র তাঁরা দলিত বা পিছড়ে বর্গের পরিবার থেকে আসা বলে। তবে, রণবীর সেনার প্রধান সংগঠকরা বা প্রধান সশস্ত্র সেনাদল এখনো অটুট রয়েছে।

ভোজপুরে আমাদের ২৫ বছরের বেশি আন্দোলনে জমিদারদের নিজস্ব বাহিনীগুলির মধ্যে এই সেনা সবচেয়ে কুখ্যাত ও সবচেয়ে নিষ্ঠুর হিসাবে উঠে এসেছে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই রীতিমতো দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিন হবে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তারা কোনো শাস্তি ভোগ না করে মানুষজনকে হত্যা করেছে, আমাদের জনসমাবেশের উপর গ্রেনেড ছুঁড়েছে এবং এমনকি পার্টি অফিস আক্রমণ করেছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ পার্টি নেতাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে।

যেহেতু ভোজপুরে গ্রামীণ সর্বহারা ‘আত্ম সচেতন শ্রেণী’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং সম্পূর্ণ প্রান্তিক অবস্থা থেকে তাঁদের পার্টি সিপিআই(এমএল)-এর পতাকাতলে জেলার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রস্থল দখল করতে এগিয়ে এসেছে এবং যেহেতু তা জনতা দল ও ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাধান্যের পক্ষে বিপদ হয়ে উঠেছে এবং সিপিআই-সিপিআই(এম)-এর মতাদর্শগত-রাজনৈতিক দেউলিয়াপনাকে উদ্ঘাটিত করে দিয়েছে, তাই এই সেনা ও প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে এক অশুভ আঁতাত খুবই স্বাভাবিক। যেহেতু ভোজপুরের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রাধান্যের জন্য গ্রামীণ গরিবদের শ্রেণী সংগ্রামকে ও নিপীড়িত জাতিগুলির সামাজিক সমতার গণআন্দোলনকে সামনে নিয়ে এসেছে, তাই সামন্ত শ্রেণী ও জাতিগুলি নির্দোষ নারী-শিশু নির্বিশেষে সর্বাপেক্ষা বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সহ গণসন্ত্রাসের কৌশল অবলম্বন করেছে। সামন্ত শ্রেণীগুলি সংগ্রামের যে রূপ গ্রহণ করেছে তা কোনো বিকৃতি নয়, বরং শ্রেণীসংগ্রামের গতি-প্রকৃতির দ্বারাই নির্ধারিত।

রাজনৈতিক দিক দিয়ে, আমরা ঠিকই বাথানিটোলাকে এক বড় প্রচার-আলোড়নের বিষয় করে তুলেছিলাম, বিধানসভায় জঙ্গী ঘেরাও থেকে শুরু করে দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক জনমতকে সমাবেশিত করি এবং শেষপর্যন্ত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বদলি করতে ও এক তদন্ত বসাতে সরকারকে বাধ্য করি। কিন্তু তৃণমূলে, রণবীর সেনার প্রধান সশস্ত্র দলকে চূরমার করে দেওয়ার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা যায়নি।

অসংখ্য গ্রামের জনগণকে সশস্ত্র করার ব্যাপারে আমরা প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছি। প্রতিরোধে সক্ষম জঙ্গী অংশ অনেক গ্রামে উঠে এসেছে। পার্টি তিনটি নির্ভরশীলতার বিরুদ্ধে মতাদর্শগত সংগ্রাম চালিয়েছে : (১) উন্নত ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে – এর পরিবর্তে পার্টি জোর দিয়েছে গেরিলা অ্যাকশনের পুরোনো ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার উপরে, যাতে ঘরোয়া অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও আরও উন্নত আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত শত্রুকে পরাজিত করা যায়, (২) প্রশাসনের উপর নির্ভরতার প্রশ্নে – এর পরিবর্তে আমরা জনগণের প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বিকশিত করার উপরে জোর দিই এবং (৩) উচ্চতর কমিটির নির্দেশের উপর নির্ভরতার প্রশ্নে – এর পরিবর্তে আমরা কর্মনীতির প্রশস্ত কাঠামোর ভিতরে, বিশেষত দ্রুত বদলা নেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় উদ্যোগকে উন্মুক্ত করার উপর জোর দিয়েছি।

রণবীর সেনা শক্তিশালী হয়ে ওঠার সাথে সাথে যাদবদের উপরও আক্রমণ চালাতে শুরু করে। ক্রমে ক্রমে যাদব কৃষক ও যুবকদের অংশবিশেষকে স্বপক্ষে জয় করে আনার মধ্য দিয়ে আমরা সামাজিক ভারসাম্যকে বদলে দিতে শুরু করেছি। এর ফলে কিছু সফল অ্যাকশন করা গেছে। আমরা ভূমিহারদের মধ্যেও আমাদের প্রচারকে বাড়িয়ে তুলেছি এবং এখন মনে হচ্ছে কিছু ফাটল বেড়ে চলেছে এবং তাদের মধ্যেকার সংঘাত তীব্রতর হচ্ছে। আমরা রাজপুতদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধক্ষেত্র খোলা সযত্নে এড়িয়ে গেছি এবং এর ফলে তাদের অংশগ্রহণ নীচুগ্রামে থেকেছে। বন্যা ও অন্যান্য ত্রাণের বিষয়ে কিষাণসভা কর্তৃক গৃহীত সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের ফলে ব্যাপক মাত্রায় সমাবেশ দেখা গেছে। আরা শহরের এক সাম্প্রতিক ঘটনায়, রণবীর সেনা কর্তৃক অপহৃত ৪ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয় এবং দুজন ‘রণবীর’কে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় জনগণের স্কোয়াডগুলি ক্রমে ক্রমে তাঁদের আক্রমণ বাড়াচ্ছে। আর আজকাল রণবীর সেনারা প্রত্যাঘাতের ব্যাপারে আগের মতো দ্রুতগতি সম্পন্ন নেই। তবু, কাজের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা জাল বিকশিত করা এবং মূল পাণ্ডাদের হদিস খুঁজে বার করা এখনো অবহেলিত।