(বেনারসে ষষ্ঠ পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণ, লিবারেশন, নভেম্বর ১৯৯৭ থেকে)

কমরেড ও বন্ধুগণ,

সিপিআই(এমএল)-এর ষষ্ঠ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর একেবারে অন্তিম লগ্নে। বিংশ শতাব্দী বিশ্ব-ঐতিহাসিক তাৎপর্যসম্পন্ন বহু বড় বড় ধরনের আলোড়কারী ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে – সাম্রাজ্যবাদের উত্থান, পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধ, সমাজতন্ত্রের উত্থান ও ঔপনিবেশিক যুগের অবসান এবং পরিশেষে সোভিয়েত ব্যবস্থার পতন ও বিশ্বায়নের অভ্যুদয়। এই শতাব্দী জুড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপুল অগ্রগতি ঘটেছে। মানুষ পৃথিবীর বুকে আত্মধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করেছে ও তার পাশাপাশি মহাশূন্যকেও নিজের কব্জায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আর সেই কারণে তথ্য ও পণ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও খুব দ্রুত অগ্রগতি ঘটেছে, যার ফলে গোটা দুনিয়াকে একটা বিশ্বজোড়া দেশের মতো দেখাচ্ছে।

বিরাট বিরাট আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের চলমান প্রক্রিয়া শ্রেষ্ঠ মানব মস্তিষ্কে প্রতিফলিত হয়েছে এবং তার ফলশ্রুতিতে এই শতাব্দী ভাবধারা ও মতাদর্শের মহাসংঘাত ও বিশাল বিশাল ব্যক্তিত্বের আবির্ভাবও প্রত্যক্ষ করেছে।

এই শতকের শুরুর দিকে যে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম, শতাব্দীর মাঝামাঝির মধ্যেই সেই সাম্রাজ্যবাদ কুখ্যাত হয়ে পড়ে। আর বর্তমানে, শতাব্দীর অন্তিম পর্যায়ে এসে বিশ্বায়নের ছদ্মবেশে সাম্রাজ্যবাদ তার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পুরোনো সাম্রাজ্যবাদ যদি শেয়ার বাজারের ফাটকার ওপর ভিত্তি করে টিকে থাকা এমন একটা শ্রেণীর জন্ম দিয়ে থাকে যারা শেয়ারের কাগজ লেনদেন করে মুনাফা কামায় তবে বিশ্বায়নের ফলে জন্ম নিয়েছে মুদ্রা নিয়ে ফাটকাবাজি চালানো একটা গোটা শ্রেণী, আইএমএফ-এর পরিচালন বোর্ডে যাদের সম্মানজনক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। মুদ্রার লেনদেন বিপুলভাবে বেড়ে ওঠার ফলে ‘আন্তর্জাতিক টাকাকড়ি’র এক বিশাল পাহাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। একে সঙ্গতভাবেই ‘আপাত টাকাকড়ি’ বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে একজন অর্থনীতিবিদের মন্তব্য, “টাকাকড়ির প্রথাগত সংজ্ঞা – তা সে পরিমাপের মানদণ্ড, মূল্যের ভাণ্ডার অথবা লেনদেনের মাধ্যম যাই হোক না কেন তার মধ্যে একে ফেলা যায় না। কিন্তু এর ক্ষমতাটা বাস্তব”। এই টাকাকড়ির গতিময়তা সর্বব্যাপী, কারণ এর কোনো অর্থনৈতিক ভূমিকা নেই। এই টাকাকড়ির পরিমাণ এত বিপুলাকার যে অর্থ, বাণিজ্য কিংবা বিনিয়োগের প্রবাহের তুলনায় কোনো একটি দেশের মধ্যে এর ঢোকা ও বের হওয়ার প্রভাব অনেক বেশি। ভারতের মতো একটা দেশের জাতীয় অর্থনীতি যেইমাত্র বিশ্ব অর্থনীতির সাথে পুরোপুরি একাত্ম হয়ে যাবে, তার মুদ্রার মাত্র কয়েক সপ্তাহের অবনমনের ফলেই দীর্ঘদিনের অর্জিত আর্থিক সুফলগুলি মুহূর্তে মুছে যেতে পারে।

এই ‘আপাত টাকাকড়ি’র আধিপত্য উৎপাদনমুখী কার্যকলাপ থেকে পুঁজির সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার প্রতীক স্বরূপ। আজকের বিশ্ব পুঁজিবাদের পরজীবীসুলভ চরিত্র এর দ্বারা আরও জোরদার হচ্ছে। আর সেই কারণে, যদিও বিংশ শতাব্দী অস্ত যাচ্ছে বিশ্ব সমাজতন্ত্রের ধাক্কার মধ্য দিয়ে, আগামী শতাব্দী নিশ্চিতভাবেই এক উন্নততর বিশ্বব্যবস্থা ও সমাজতন্ত্রের এক নতুন সংস্করণের জন্য নতুন নতুন ধ্যানধারণা, নতুন নতুন শক্তি ও নতুন নতুন আন্দোলনের পুনরুজ্জীবনের মধ্য দিয়েই ঘটবে।

অসমাপ্ত স্বপ্ন ও অসমাপ্ত প্রকল্পগুলি আগামী সহস্রাব্দের হাতে তুলে দিয়ে বিংশ শতাব্দী তার অন্তিম লগ্নের দিকে এগিয়ে চলেছে। আসুন, এই কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সাম্যবাদের এক ঐক্যবদ্ধ, আত্মপ্রত্যয়ী ও শক্তিশালী পার্টি হিসাবে একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করি।

আমাদের ষষ্ঠ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯৯৭ সালে, যখন আমাদের দেশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের জোয়াল থেকে স্বাধীন হওয়ার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে। ভারতীয় জনগণের কাছে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত মোটেই স্বতঃস্ফূর্ত উল্লাসের মুহূর্ত হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যেই ভারতের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিক শোষকদের শক্তিশালী আক্রমণের বিপদের মুখে রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ দিক থেকে স্বাধীনতা শাসক অভিজাতদের এক সমগ্র শ্রেণীর একচ্ছত্র অধিকারে পর্যবসিত হয়েছে। এই স্বাধীনতা হচ্ছে তাদের লুণ্ঠন, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের স্বাধীনতা।

বুর্জোয়া আধিপত্যের প্রতিষ্ঠানগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে : বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক শ্রেণী আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে, আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে, সংসদ বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে, নির্বাচন কমিশন সরকারের বিরুদ্ধে ইত্যাদি। নিজেদের স্বনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপের পরিসরকে সম্প্রসারিত করার জন্য সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে এবং তার চূড়ান্ত ফলাফল দাঁড়িয়েছে প্রত্যেকেরই বিশ্বাসযোগ্যতার হানি।

সর্বব্যাপী বিশৃঙ্খলার পরিবেশের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হল। দেশজুড়ে বুদ্ধিজীবীরা ব্যাপক ধরনের আলাপ-আলোচনায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে এবং জাতীয় এজেন্ডা নির্ধারণ করার জন্য জাতীয় সংসদের এক অভূতপূর্ণ চার দিনব্যাপী অধিবেশন সংগঠিত হয়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ও এমনকি অপরাধীকরণ, দুর্নীতি ও নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তীব্র আহ্বান শোনা গেছে। কিন্তু এসবই এক আনুষ্ঠানিক চর্চায় পর্যবসিত হয়েছে এবং দেশ আগে যে রকম দিশাহীন ছিল সে রকমই রয়ে গেছে।

উদারীকরণ ও বিশ্বায়ন সম্পর্কে ভারতীয় শাসককূল এক জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলেছে। ভারতীয় জনগণ উন্নত জীবনযাত্রার মান বাছাই করে কেনার অধিকার লাভ করার আকাঙ্খা পোষণ করেন এই অজুহাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরম এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর মতে, “এক আগে পছন্দ সীমাবদ্ধ ছিল এ্যাম্বাসাডার থেকে এ্যাম্বাসাডার আর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস থেকে ইন্ডিয়ান এরায়লাইনসের মধ্যে।” এর থেকেই স্পষ্ট যে কোন ধরনের জনসাধারণের কথা তিনি বলেছেন এবং তার ওপর, এর দ্বারা উদারীকরণ ও বিশ্বায়নের ভারতীয় সংস্করণের সমগ্র শ্রেণী অন্তর্বস্তুই উদ্ঘাটিত হয়ে যায়।

‘কম্পিউটার চিপস বনাম পটাটো চিপস’ বিতর্কের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে শ্রীচিদাম্বরম জবাব দেন, “বিদেশী বিনিয়োগ (যে কোনো রূপে ও যে কোনো ক্ষেত্রে) যদি কর্মসংস্থান ঘটাতে পারে, আয় সৃষ্টি করতে পারে ও সম্পদের জন্ম দিতে পারে তবে তা ঠিকই আছে।”

বহুজাতিক সংস্থাগুলি ও ভারতীয় বুর্জোয়াশ্রেণী উভয়েরই সবচাইতে পছন্দের ব্যক্তি চিদাম্বরম বর্তমান সংযুক্ত মোর্চা সরকারের অর্থনৈতিক দর্শনকে প্রতিফলিত করেন, যে সংযুক্ত মোর্চা সরকার পূর্বতন রাও জমানাকে বহুদূর পর্যন্ত ছাপিয়ে গিয়ে উদারীকরণের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তার ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি সব ধরনের শাসক অভিজাতদের মধ্যেকার আপোশ ঐকমত্য ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভারতের ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলির দক্ষিণপন্থী সমাধানের জন্য এই উন্মত্ত প্রচেষ্টা কেবলমাত্র মৌলবাদী শক্তিগুলির মনোবলকেই বাড়িয়ে তুলেছে এবং এই প্রথমবারের জন্য সত্যিকারের এক গৈরিক বিপদের খাঁড়া ভারতের মাথার ওপর ঝুলছে। এখানে, ভারতের স্নায়ুকেন্দ্র ও ভারতের সবচাইতে জনবহুল রাজ্য এই উত্তরপ্রদেশে, গত নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে এবং তার কোনো সমাধানই পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র এক দিন আগেই বিজেপি ও বিএসপি-র মধ্যকার অনীতিনিষ্ঠ আঁতাত ভেঙ্গে গেছে এবং রাজ্যের পরিস্থিতি আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে এসেছে। কল্যাণ সিং-এর ক্ষমতায় ফিরে আসার অর্থ হল জাতীয় এজেন্ডায় অযোধ্যা আবার ফিরে আসা। তার ওপরে, এর সাথে যুক্ত হয়েছে খুঁচিয়ে তোলা চিত্রকূট ইস্যু এবং স্পষ্ট দলিত-বিরোধী সংকেত ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে দু-দুবার বিজেপির স্বল্পমেয়াদী ক্ষমতারোহণ পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে এই দলটি যদি কোনোভাবে কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করতে পারে তাহলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, প্রগতিশীল আন্দোলন, বৌদ্ধিক, নান্দনিক ও শিক্ষাগত স্বাধীনতা, গ্রামীণ গরিবদের সংগ্রাম, দলিত, মহিলা তথা ধর্মীয় ও জাতীয় সংখ্যালঘুদের সামাজিক সাম্য ও প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও সর্বাধিক বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমাদের সামনে রয়েছে, সাম্প্রদায়িক-ফ্যাসিবাদী শক্তির দ্বারা ভারতকে কব্জা করে নেওয়াকে প্রতিহত করতে সমস্ত গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির এক জঙ্গী সংহতি গড়ে তোলার এজেন্ডা।

আসুন, এই কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় মুক্তি ও জনগণতন্ত্রের এক ঐক্যবদ্ধ, আত্মপ্রত্যয়ী ও শক্তিশালী পার্টি হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটনোর সংকল্প গ্রহণ করি।

এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহান নকশালবাড়ি অভ্যুত্থানের ত্রিংশতিতম বর্ষে, যে অভ্যুত্থান ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে গভীরভাবে গেড়ে বসে থাকা সুবিধাবাদের সাথে এক নির্ধারক বিচ্ছেদের প্রতীকস্বরূপ হয়ে উঠেছিল এবং যে অভ্যুত্থান ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সে পর্যন্ত ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য কৃষি-বিপ্লবকে আশু এজেন্ডায় নিয়ে এসেছিল। বর্বর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে বেশ কয়েকবার এই আন্দোলনকে মনে হয়েছে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু প্রতিবারই তা প্রবাদের ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে।

নকশালবাড়ি যে সামাজিক পরিবর্তনের পথ দেখিয়েছিল ৯০-এর দশকে এসে তা এক নতুন প্রাণ পায়, যার ফলে এক নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে ওঠে। বিরাট সামাজিক মন্থন ও তার ফলশ্রুতি স্বরূপ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রক্রিয়ার মধ্যে পুরোনো স্লোগানগুলি দ্রুত তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে এবং নায়কেরা অচিরেই খলনায়কে পরিণত হচ্ছে।

আমাদের একেবারে চোখের সামনেই এক সর্বব্যাপী সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং দেশ এক নতুন, আমূল ও প্রথাবহির্ভুত সমাধানের জন্য রব তুলছে। কমিউনিস্ট আন্দোলনের সুবিধাবাদী অংশটি শাসক কেন্দ্রীয় সংস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠার সাথে সাথে বাম আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পুরোপুরি উঠে এসেছে বিপ্লবী বামপন্থীদের কাঁধে। এটা একই সাথে ভারতের বাম আন্দোলনের নেতৃত্বকারী আসন থেকে সরকারি মার্কসবাদীদের হটিয়ে দেওয়ার সুযোগ আমাদের সামনে হাজির করেছে।

নতুন অবশ্যম্ভাবীভাবেই পুরোনোর জায়গা নেয় – এটা ইতিহাসের অলঙ্ঘ নিয়ম। আসুন, এই কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আমরা সামাজিক ন্যায় ও বিপ্লবী পরিবর্তনের এক ঐক্যবদ্ধ, আত্মপ্রত্যয়ী ও শক্তিশালী পার্টি হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটাই।

গত পার্টি কংগ্রেসের পরবর্তী পর্যায়টি ছিল পার্টি পুনর্গঠনের পর থেকে আমাদের পার্টির ইতিহাসে সবচাইতে রক্তাক্ত অধ্যায়। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় মদতপ্রাপ্ত জমিদারদের ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী তথা সম্পূর্ণভাবে অধঃপতিত নৈরাজ্যবাদী দুর্বৃত্তদল কর্তৃত সংঘটিত একটার পর এক হত্যাকাণ্ডে আমরা দুশোর বেশি পার্টি ক্যাডার ও সমর্থককে হারিয়েছি। শিশুদের বলি দেওয়া হয়েছে, মহিলাদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে এবং বৃদ্ধ ও যুবক নির্বিশেষ পুরুষদের জঘন্যতম মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। বক্তৃতা দেওয়ার সময় বা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় সম্ভাবনাময় তরুণ কমরেডদের গুলি করে মারা হয়েছে, জনসমাবেশের ওপর গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছে, পার্টি অফিসের ওপর আক্রমণ হয়েছে ও হাজার হাজার মানুষকে জেলে পাঠানো হয়েছে, এসবই করা হয়েছে সিপিআই(এমএল)-এর অগ্রগতি ঠেকানোর মরীয়া প্রচেষ্টায়।

আমরা আমাদের বীর শহীদদের স্মৃতি ভুলিনি, ভুলিনি ঘাতকদের চেহারাও। কোনোকিছুই সিপিআই(এমএল)-এর সামনের দিকে এগিয়ে চলা ঠেকাতে পারবে না। আসুন, এই কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আমরা শহীদদের স্বপ্ন ও শত্রুদের বিভীষিকা স্বরূপ এক ঐক্যবদ্ধ, আত্মপ্রত্যয়ী ও শক্তিশালী পার্টি গড়ে তোলার সংকল্প গ্রহণ করি।