[ সিপিএন(ইউএমএল)-এর পার্টি কংগ্রেসে প্রদত্ত ভাষণ (সংক্ষেপিত)। লিবারেশন, এপ্রিল ১৯৯৩ থেকে ]

গতকাল কংগ্রেসের এই মঞ্চ থেকে মার্কসবাদ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রাসঙ্গিকতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলে যখন একটি দলিল উপস্থাপিত হচ্ছিল, অনেক প্রতিনিধিই তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এই ধরনের বিজাতীয় ধ্যান-ধারণার প্রতি বিশেষত নেপালের তরুণ কমিউনিস্ট বন্ধুরা যে ক্রোধ ও ঘৃণা ব্যক্ত করেছেন তা আমাকে যথেষ্ট আলোড়িত করেছে।

আপনাদের কংগ্রেসের কোনো বিশেষ দলিল সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করছি না। সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলনকেই ক্লিষ্ট করছে এমন এক প্রবণতার কথাই আমি বলছি। এ হল সেই বিলোপবাদী প্রবণতা যার বিরুদ্ধে আমাদের পার্টিকেও সাম্প্রতিক অতীতে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। আজ প্রতিটি কমিউনিস্ট পার্টিকেই এই বিলোপবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য দলিলগুলির অনুধাবনে ঐ একই কমরেডরা যে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তাও আমাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। ধ্যানধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির এই জীবন্ত আন্তঃক্রিয়া ছাড়া আমরা আমাদের শত্রুকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করতে পারব না, পারব না আমাদের মতাদর্শগত প্রতিপক্ষকে যোগ্য জবাব দিতে।

সমাজতন্ত্র অবশ্যই এক গুরুতর সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে। কমরেডগণ, এই সংকটের গুরুত্বকে খাটো করে দেখা বা তাকে আমল না দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। মার্কসবাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে শুধুমাত্র পুনর্ঘোষণা করে এবং মার্কসবাদ অপরাজেয় বিবৃতি দিয়ে কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না। মূল বিষয় হল বর্তমানের সমস্যাবলীর প্রতি মার্কসীয় উত্তর খোঁজা,  মূল বিষয় হল মার্কসবাদের বিপ্লবী আত্মার পুনরুদ্ধার। যাঁরা বলেন যে কিছু দেশে বর্তমানে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে বলেই কমিউনিজম সংকটে পড়েছে, তাঁদের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করি না। কমিউনিজমকে যাঁরা দারিদ্রের দর্শন বলে বোঝেন তাঁরা নিজেদের দর্শনের দারিদ্র্যই প্রকাশ করেন। কমিউনিজম বস্তুত প্রাচুর্যের দর্শন। মানুষের প্রয়োজনের পরিপূর্ণ নিবৃত্তি সুনিশ্চিত করার জন্য বস্তুসামগ্রীর সুপ্রচুর লভ্যতা হল কমিউনিজমের পূর্বশর্ত।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব আজকের দুনিয়ায় যে বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটিয়ে চলেছে তা কমিউনিজমের দিকে মানবজাতির অপ্রতিহত যাত্রার প্রয়োজনীয় বস্তুগত শর্তও সৃষ্টি করেছে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের বিকাশ দৈহিক শ্রম ও মানসিক শ্রমের মধ্যে ব্যবধান মুছে ফেলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। প্রয়োজনীয় ভিত্তি প্রস্তুত হয়ে চলেছে, শুধু পুঁজিপতি ও সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে উৎপাদনের উপকরণগুলির নিয়ন্ত্রণকে আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে যাতে অপ্রতিহত ও অবিকৃতভাবে উৎপাদিকা শক্তিগুলির বিকাশ ঘটতে পারে।
আপনারা যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র আপনাদের কমিউনিস্ট পার্টিই তার নিজস্ব সরকার গঠনের মতো অবস্থায় পৌঁছেছে। আমরা যারা ভারতবর্ষ এবং এশিয়ায় বসবাস করি, আর শুধু এশিয়া কেন, পৃথিবীর কমিউনিস্ট আন্দোলনে আপনাদের দলের ওপর আমাদের সকলেরই আস্থা রয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে ও সাহসের সঙ্গে আপনারা আপনাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবেন বলে আমরা আশা করি। আমরা আপনাদের চমৎকার সাফল্য কামনা করি। আপনাদের লাল সেলাম জানাই।