(লিবারেশন, মার্চ ১৯৯০ থেকে)

মানব সভ্যতার ইতিহাস ৯০-এর দশকে প্রবেশ করল। গত দশকের শেষ বছরটিতে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে, বিশেষত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে একের পর এক আলোড়নময় ঘটনাগুলি ঘটে যায়। এই ঘটনাগুলিতে বুর্জোয়া বিশ্ব উল্লাসে ফেটে পড়ছে। বুর্জোয়া সংবাদ মাধ্যমও সুরে সুর মিলিয়ে আরও একবার, এই শতাব্দীতে সম্ভবত তৃতীয়বার, কমিউনিজমের মৃত্যু ঘোষণা করে দিয়েছে। সর্বত্রই বুদ্ধিজীবীরা দোদুল্যমানতা দেখাচ্ছেন এবং কমিউনিস্ট পার্টি পরিত্যাগ করতে শুরু করেছেন। আমাদের পার্টির মধ্যেও এই ঘটনার প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। পার্টির মধ্যেকার যে বিলোপবাদী ধারা সিপিআই(এমএল)-এর প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কেই প্রশ্ন তুলেছিল, তা এখন মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিজ্ঞান সম্পর্কেই সংশয় ছড়াতে শুরু করেছে। এর প্রবক্তারা এখন নিজেদের কমিউনিস্ট বলতেই লজ্জাবোধ করেন, তার পরিবর্তে নিজেদের ‘গণতন্ত্রী’ হিসাবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করছেন। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত প্রকৃত কমিউনিস্টদের অবধারিত কর্তব্য হল মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা, উদারনীতিবাদী বুর্জোয়া মহলের সমস্ত আক্রমণ থেকে তাকে রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতাগুলিকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করা এবং নতুন নতুন প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করে ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করা।

সিপিআই(এমএল)-এর অবস্থান সঠিক প্রমাণিত

অন্যান্য দুটি কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ সিপিআই ও সিপিআই(এম) যারা এই সেদিনও পর্যন্ত সোভিয়েত ও পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক মডেলকে দৃষ্টান্তমূলক বলে মনে করত এবং নিয়মমাফিক তাদের প্রশংসা বন্দনা করত, তাদের বিপরীতে সিপিআই(এমএল) একেবারে শুরু থেকেই এই সমস্ত ব্যবস্থাকে খুবই সমালোচনার চোখে দেখত। এটা ঠিকই যে তাদের সমালোচনা করতে গিয়ে আমরা একেবারে চরমে পৌঁছে গেছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে আমলাতান্ত্রিক বিচ্যুতি, সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র দিতে অস্বীকার করা ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমাদের মূলগত সমালোচনা ইতিহাসের পরীক্ষায় সফল বলে প্রমাণতি হয়েছে।

সিপিআই(এমএল)-ই ছিল একমাত্র ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি যে ১৯৬৮-তে এক গণঅভ্যুত্থানকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে চেকোশ্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত সেনা পাঠানো, রাশিয়ার আফগানিস্তান আক্রমণ ও রাশিয়ার মদতপুষ্ট ভিয়েতনামের কামপুচিয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন নিন্দা জানিয়েছিল। আমরা এই সমস্ত প্রশ্নে আমাদের মৌলিক অবস্থান থেকে কখনও সরে আসিনি এবং ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে আমরা সঠিকই ছিলাম।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যখন সোভিয়েত বিরোধী ফ্রন্ট গঠন করার পক্ষে ওকালতি শুরু করল, যে ফ্রন্টে আমেরিকা ও মার্কিনপন্থী শক্তিগুলি থাকবে, আমরা তখন তাতে যোগ দিতে অস্বীকার করি। চীনা নীতি সম্বন্ধে আমরা বারবার আমাদের ভিন্নমত জানিয়েছি এবং পাশ্চাত্য দেশগুলির সঙ্গে আন্তঃক্রিয়া ঘটানোর ক্ষেত্রে উদারনৈতিক বুর্জোয়া ধ্যানধারণার প্রভাবের বিরুদ্ধে এক মতাদর্শগত অভিযানের প্রয়োজনীতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছি।

সোভিয়েত ইউনিয়নে গর্বাচেভীয় সংস্কার যখন ব্রেজনেভের সময়কার রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অধঃপতনের দিকে সকলের নজর কেন্দ্রীভূত করে ও আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনা পাঠানোর ব্যাপারটা সমালোচনামূলকভাবে পুনর্মূল্যায়ন করে তখন সেই সংস্কারের প্রেক্ষাপটেই আমরা সোভিয়েত রাশিয়াকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী আখ্যা দেওয়ার পূর্ববর্তী অবস্থানটি পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিই।

১৯৮৭-তে অনুষ্ঠিত আমাদের পার্টির চতুর্থ কংগ্রেসে আমরা দেখিয়েছি যে ব্রেজনেভের সময়কার সোভিয়েত রাশিয়ায় যে মূলগত অধঃপতন ঘটেছিল তাকে সমালোচনা করার মধ্যে আমাদের ভুলটা ছিল না। বরং সেটা ছিল পার্টি ও ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিবর্তন ঘটানোর সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ নাকচ করার মধ্যে।

আমরা অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের বৃহৎশক্তিসুলভ অবস্থানের সমালোচনা চালিয়ে গেছি এবং সাম্রাজ্যবাদকে উজ্জ্বলভাবে চিহ্নিত করা ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করার ব্যাপারে গর্বাচভের নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সমালোচনা কেন্দ্রীভূত করেছি। বিলোপবাদী প্রবণতার প্রবক্তারা শান্তিপ্রিয়, সভ্য সাম্রাজ্যবাদ সংক্রান্ত গর্বাচেভীয় তত্ত্বের দ্বারা ভেসে যান এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে সমস্ত ধরনের সমালোচনামূলক মন্তব্য বাতিল করার আকাঙ্খা প্রকাশ করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নে স্তালিনের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক বিদ্বেষমূলক প্রচার এবং সমগ্র বুর্জোয়া বিশ্বের দ্বারা রাশিয়ার ব্রেজনেভীয় জমানাকে ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির অনুরূপ সরকারকে স্তালিনপন্থী বলে দেখানোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা তার সঙ্গে সুরে সুর মেলাতে অস্বীকার করি। আমরা বিশ্বাস করতাম এবং আজও করি যে স্তালিন ও ব্রেজনেভের রাজত্বের মধ্যে ভালোমাত্রায় পার্থক্য করতে হবে। আমরা এখনও স্তালিন সম্বন্ধে মাও-এর এই মূল্যায়নকে মেনে চলি যে তাঁর ভুলের তুলনায় তাঁর সাফল্যের পাল্লা অনেকগুণ ভারী।

প্রথমত, রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র গঠনের ৭০ বছরের ইতিহাসে স্তালিনের সময়কালই এখনও সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। এক পশ্চাদপদ কৃষিপ্রধান দেশ থেকে সেসময় রাশিয়াকে বিশ্বের প্রথম সারির শিল্পোন্নত দেশগুলির আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমগ্র ইতিহাসে এই সময়কালই সর্বাপেক্ষা দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির পর্যায় হিসাবে চিহ্নিত আর এই সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করেই সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বাত্মক নাৎসী আক্রমণের মোকাবিলা করে। এই সময়কালকে এক অপরাধময় পর্যায় হিসাবে অভিহিত করা ইতিহাসের অপলাপ। এর বিপরীতে, ব্রেজনেভ জমানা এক সার্বিক গতিরুদ্ধতার কাল হিসাবেই চিহ্নিত।

দ্বিতীয়ত, একথা সত্যি যে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল লাল ফৌজের ক্ষমতার জোরেই। কিন্তু একথা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে সেই সময়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে কমিউনিস্ট পার্টিগুলির অগ্রগতি হচ্ছিল এবং কেবলমাত্র তাদের নেতৃত্বাধীন জনপ্রিয় ফ্রন্টগুলিই নাৎসী দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত দেশগুলির বুর্জোয়া-জমিদার শাসকবর্গ হয় নাৎসীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল অথবা পালিয়ে গিয়েছিল। বিপরীতে, চেকোশ্লোভাকিয়ায় সৈন্য পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এক জমানার বিরুদ্ধে জনপ্রিয় বিদ্রোহকে দমন করা।

তৃতীয়ত, একথাও সত্যি যে স্তালিনের সময়কালেই সোভিয়েত রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের মধ্যে অতিবৃহৎ শক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা ভিত্তিক সম্পর্কের বীজ বোনা হয় এবং সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টিগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক নেতৃত্বকারী পার্টি বনাম নেতৃত্বাধীন পার্টির বিকৃত রূপ পরিগ্রহ করে। তখনও পর্যন্ত অবশ্য কমিউনিস্ট দুনিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি যে বিপুল মর্যাদার অধিকারী ছিল, তার ফলে অন্যান্যদের মধ্যে তার নেতৃত্বকারী ভূমিকা সম্পর্কে এক জনপ্রিয় গ্রহণযোগ্যতাও ছিল। ব্রেজনেভ শাসনকালের মতো সেটি কিন্তু কোনো আরোপিত সম্পর্ক ছিল না।

চতুর্থত, স্তালিন ও তাঁর সময়কালের কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বিলাসিতা ও স্বজনপোষণের কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ব্রেজনেভ আর পূর্ব ইউরোপ জুড়ে তার অনুচরদের বিরুদ্ধে ঐ ধরনের ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে।

ট্রটস্কি বা বুখারিনের তত্ত্ব তৎকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র গঠনের পক্ষে সহায়ক হত, আমরা তা মনে করি না। স্তালিনের সময়কালে সবচেয়ে গুরুতর বিচ্যুতি ঘটেছিল আন্তঃপার্টি সংগ্রামের ক্ষেত্রে যা ফলত পার্টি প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যাপক অবক্ষয়ের বিনিময়ে তাঁকে ঘিরে এক ব্যক্তি পূজার ধারার জন্ম দেয়। এর যুক্তিসঙ্গত পরিণতি হিসাবে এবং অর্থনীতির মাত্রাতিরিক্ত কেন্দ্রীভবনের ফলে পার্টি ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আমলাসুলভ আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন এবং সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলিতে গুরুতর বিপর্যয় ঘনিয়ে আসে। পিছন ফিরে তাকালে মনে হয়, এক বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ‘একটি মাত্র দেশে সমাজতন্ত্র নির্মাণের’ মূল্য সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি ও সোভিয়েত সমাজকে ঐরকমভাবেই দিতে হয়েছিল। এটিই প্রত্যাশিত ছিল যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে পার্টি নেতৃত্ব ঐ ভুলগুলি সংশোধনের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন। কিন্তু ব্রেজনেভের আমলে বিচ্যুতিগুলি অব্যাহত থাকে; যা ঐতিহাসিক বিয়োগান্তক ঘটনা হিসাবে দেখা দিয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি পরিণত হয় প্রহসনে।

যে তত্ত্ব বলে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি যে ‘অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে তার বিপর্যয়ের মূল কারণ, সেই তত্ত্বের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি না। এই যুক্তিধারাকে সম্প্রসারিত করলে দেখা যাবে যে সোভিয়েত ও চীনা সমাজতান্ত্রিক সমাজও ‘অস্বাভাবিক’ রূপে দেখা দিচ্ছে। কেননা মার্কস সর্বাপেক্ষা উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলিতেই সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এক্ষেত্রে তার হুবহু মিল দেখা যায় না।

এই লেনিনীয় বিধানের প্রতি আমাদের বিশ্বাস এখনও অবিচল – রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ কমিউনিস্ট পার্টির কাছে এলে তাকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এবং তারপর সমাজকে নতুন করে গড়তে হবে।

সোভিয়েত রাশিয়া, চীন ও পূর্ব ইউরোপের বিকৃতির সন্ধান ক্ষমতা দখলের মধ্যেই না করে তা করতে হবে সর্বহারার ক্ষমতা পরিচালনার ধারার মধ্যে।

অতিরিক্ত মাত্রায় কেন্দ্রীভবন ও সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির অবক্ষয়ের পরিণতিতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে যে আমলাতান্ত্রিক বিকৃতি দেখা দেয় তা যেমন সত্য, তেমনি সাধারণভাবে বলতে গেলে একথাও সত্যি যে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং পার্টি ও প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্য থেকে রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ঐ বিকৃতিগুলির সংশোধন করাও সম্ভব। চীনে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান এবং রাশিয়ায় গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রৈকার ইতিবাচক দিকগুলি এই বিষয়টিকেই প্রতীয়মান করে।

পূর্ব ইউরোপের ঘটনাবলী

কমিউনিস্ট পার্টিগুলির জীবনে এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরে বিকৃতিগুলি ছাড়াও পূর্ব ইউরোপের সমস্যাবলীকে আরও জটিল করে তুলেছিল যে বিষয়টি তা হল, সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টিগুলি সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর চূড়ান্ত মাত্রায় নির্ভরশীল ছিল এবং এক ধরনের অতিবৃহৎশক্তি বনাম তাঁবেদার রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত রাশিয়া-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আবেগও যথেষ্ট তীব্র ছিল। এর ফলে জনগণ থেকে কমিউনিস্ট পার্টিগুলির ব্যাপক বিচ্ছিন্নতা ঘটে এবং চার্চ ও অন্যান্য অনেক বিরোধী শক্তিগুলি জাতীয়তাবাদী আবেগে নেতৃত্ব দিয়ে সামনে চলে আসে।

পূর্ব ইউরোপে যখন এই শক্তিশালী জনপ্রিয় বিক্ষোভের ফল্গুধারা বয়ে চলেছিল, সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্রাসনস্ত ও পেরেস্ত্রৈকা তাদের কাছে বিরাট নৈতিক অনুপ্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষেও এই অস্বস্তিকর সম্পর্ককে টেনে চলা আর সম্ভব হচ্ছিল না এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সোভিয়েত সমাজের মধ্যেকার পরিবর্তনের ধারাও পূর্ব ইউরোপে একই ধরনের পরিবর্তনকে অপরিহার্য করে তুলেছিল। এটিই ছিল পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা, কেননা এছাড়া আর অন্য কোনো অর্থপূর্ণ পথে এই দুই সমাজের মধ্যে আন্তঃক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা সম্ভব ছিল না। সোভিয়েতের অগ্রাধিকার স্পষ্টতই ছিল সংস্কারের মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টিগুলির মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা। এর মধ্যে যে ঝুঁকি রয়েছে গর্বাচভ সে সম্পর্কে অবহিত ছিলেন এবং সে ঝুঁকি নিতে তিনি দ্বিধা করলেন না। চেকোশ্লোভাকিয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হবে না বলে সোভিয়েত যে ঘোষণা করে, সেটিই পূর্ব ইউরোপের বিস্ফোরণের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক শর্ত হিসাবে কাজ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পূর্ব ইউরোপের পরিবর্তনগুলি ঘটিয়েছে এমন মনে করার কোনো ভিত্তি নেই। খুব সম্ভবত যে গতিতে ঘটনাবলী এগিয়েছে এবং পরিবর্তনকামী যে শক্তিগুলি সামনে এসেছে, তা একেবারেই তাদের ধারণার বাইরে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে এখনও মূলত অতিবৃহৎশক্তি বনাম তাঁবেদার রাষ্ট্রের সম্পর্ক বজায় থাকলেও, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি এখন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাপেক্ষে অধিকতর মাত্রায় স্বাধীনতা ও প্রয়োগকৌশল ক্ষমতা ভোগ করে। একথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, পূর্ব ইউরোপের পরিবর্তনগুলি এবং তারা যে পশ্চিমের কাছে নিজেদের উন্মুক্ত করে দিয়েছে, এ সবই সোভিয়েতের বর্তমান নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। গর্বাচভ যখন বলেন যে পূর্ব ইউরোপের পরিবর্তনগুলি সমাজতন্ত্র, অর্থাৎ সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের স্বার্থের পরিপন্থী নয়, তখন তিনি একেবারে যথার্থ কথাই বলেন। তাঁর নববর্ষের ভাষণে গর্বাচভ বলেছেন, “পূর্ব ইউরোপ সব সময়েই সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নির্ভর করতে পারে” এবং পূর্ব ইউরোপ অবশ্যই তা করে যাবে।

এই প্রেক্ষাপটে রুমানিয়ার ঘটনা একেবারে আলাদা। চৌসেস্কু দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর সাপেক্ষে এক স্বাধীন নীতি নিয়ে চলছিলেন এবং রুমানিয়াকে পশ্চিমের কাছে অনেকটাই উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাঁর নিজের এক শক্তিশালী ভিত্তি ছিল। তাঁর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ থাকলেও, তাঁর অপসারণে সেনা বাহিনীর জড়িত থাকা এবং পরবর্তীতে তাঁর হত্যা থেকে এটি বোঝা যায় যে, সেক্ষেত্রে নীচের থেকে গণবিদ্রোহের চেয়ে সমাজের ওপর তলার মধ্যকারই এক লড়াই-ই বেশি ছিল।

এছাড়াও, চৌসেস্কুর অপসারণে রাশিয়ার নির্দিষ্ট স্বার্থ, রুমানিয়ার ঘটনাবলী সম্পর্কে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তীতে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি – এ সমস্ত কিছুই অভিযোগের তীর রাশিয়ার দিকেই নির্দেশিত করে।

অবশ্য, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির, যেখানে পুঁজি গঠনের হার অত্যন্ত নিম্নস্তরের, সেই দেশগুলির সমস্যা সমাধান করা পুঁজিবাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র অনেক বেশি ‘স্বাভাবিক’। পুঁজিবাদী পথ এই দেশগুলির ব্যাপক জনগণের জন্য কেবলমাত্র আরও দুর্দশাই নিয়ে আসবে এবং এই দেশগুলিকে নয়া-উপনিবেশবাদী শোষণের কাছে প্রতিরোধহীন করে তুলবে।

দ্বিতীয়ত, দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি একগুচ্ছ অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। আর যে দেশগুলিতে তা করা সম্ভব হয়নি, সেখানেও নতুন শাসককূল সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে সমস্যায় পড়ছেন। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরীর সরকারের কিছু পদক্ষেপ জনগণ অবশ্যই ভালো চোখে নেবেন না।

পরবর্তী যে পরিবর্তনের ধারা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় সাধন গড়ে তুলবে তা আর খুব দূরে নয়।

নতুন বিতর্ক

নয়া ঔপনিবেশিক শোষণ চালায় না এমন এক শান্তিপূর্ণ, সভ্য সাম্রাজ্যবাদ; জাতি, রাষ্ট্র ও মহাদেশগুলির পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসা; বিশ্ব শান্তির নামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা ইত্যাদি সংক্রান্ত গর্বাচভের ধারণাগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক সংগঠন ও জনগণের মনে সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিই নয়া ঔপনিবেশিক শোষণের সবচেয়ে বড় শিকার এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই-এর ধার কমিয়ে দেওয়ার জন্য যে উপদেশবাণী তাদের শোনানো হচ্ছে তাকে তাদের স্বার্থের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করা হচ্ছে। দুটি বৃহৎ শক্তির পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসা এইভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মৌলিক স্বার্থের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এইভাবে আমরা সিপিসি ও সিপিএসইউ-র মধ্যে নতুন একপ্রস্থ মহাবিতর্কের সম্ভাবনা দেখছি। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে এবং আমাদের চতুর্থ পার্টি কংগ্রেসে গর্বাচভের সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে তত্ত্বের বিরোধিতা, যা এদেশে সম্ভবত আমরাই প্রথম করেছি, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তৃতীয় বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী পার্টি ও সংগঠনগুলির পক্ষাবলম্বন না করে পারি না। যাই হোক, সোভিয়েত ইউনিয়নে গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রৈকার ইতিবাচক মূল্যায়ন করার সাথে সাথে নিরস্ত্রীকরণ ও বিশ্বশান্তির পক্ষে সোভিয়েত পদক্ষেপগুলিকে আমরা সমর্থন করে যাব। অপরদিকে আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান ও মতাদর্শগত রাজনৈতিক শিক্ষাদান ছাড়াও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নে চীনে এখনও অনেক কিছু করার আছে। অন্ধভাবে কোনো না কোনো ‘নেতা পার্টি’ ও তাদের ক্যারিশ্মা সম্পন্ন নেতাদের অনুকরণ করার মুৎসুদ্দি মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। পশ্চিমী প্রচারবিদদের কাছেও আমাদের মস্তিষ্ক বন্ধক দেওয়া চলবে না। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মৌলিক নীতিমালার উপর ভিত্তি করে এবং আমাদের দেশ, জনগণ ও আমাদের পার্টির স্বার্থকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রেখেই আমরা অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টির সূত্রায়ন ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলির স্বাধীনভাবে বিচার করব।

আমাদের দেশে কমিউনিস্ট পার্টির সংহতকরণ বনাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সম্প্রসারণ করা সম্পর্কে

ক্রুশ্চেভের সময় থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য সোভিয়েতের সাহায্যে পুঁজিবাদী স্তরের মধ্য দিয়ে না গিয়ে সরাসরি সমাজতন্ত্রে পৌঁছনোর ওকালতি করে আসছে। রাজনৈতিক দিক থেকে এর অর্থ হল, সাম্রাজ্যবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টিকে শাসক ‘জাতীয় বুর্জোয়াদের’ সঙ্গে ব্যাপকতর জোটে আবদ্ধ হতে হবে। সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর অর্থ হল, সোভিয়েতের সাহায্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটানো, যে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বেসরকারি ক্ষেত্রের বিরুদ্ধে এক দুর্গ হিসাবেই কাজ করবে এবং যার উপর ভিত্তি করে এই দেশগুলি সমাজতন্ত্রে পৌঁছে যেতে সমর্থ হবে। সিপিআই-এর ‘জাতীয় গণতন্ত্রের’ ধারণা এই প্রেক্ষিতের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল এবং সিপিআই(এম)-ও অনেকটাই এই পথ অনুসরণ করেছিল। তার শুরু থেকেই সিপিআই(এমএল) রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে কল্পকথার স্বরূপ উদ্ঘাটন করে দিয়েছে এবং দেখিয়ে এসেছে কীভাবে তা একচেটিয়া পুঁজির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আমলাতান্ত্রিক পুঁজির জন্ম দেয়।

সোভিয়েত তাত্ত্বিকরা এখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র অদক্ষতা, অপচয় ও আমলাতন্ত্র সৃষ্টি করে। তৃতীয় বিশ্বের জন্য এখন যে নতুন মডেলের কথা তাঁরা বলছেন, তাঁদের ভাষায় যাকে বলে ‘গণতান্ত্রিক’ অথবা ‘সুসভ্য পুঁজিবাদ’। একথা উল্লেখ না করলেও চলে যে, এই নতুন দাওয়াই তাঁদের নিজস্ব সমাজের পরিবর্তনশীল ধারার প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এখন আবার তাঁরা আহ্বান জানিয়েছেন, ‘সুসভ্য পুঁজিবাদ’-এর প্রতিনিধিত্বকারী শক্তিগুলির সঙ্গে এক ব্যাপকতর জোটে আবদ্ধ হতে হবে। আমরা জানি না, ভি পি সিং-এর জন্য সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এর এই নতুন অনুরাগ ঐ বাতলানো পথের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে এসেছে কিনা। যাই হোক, জনগণতন্ত্রের দিকে যাত্রার এও এক পথ বটে!

মাও-এর নয়া গণতন্ত্রের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে আমরা এক গণতান্ত্রিক মোর্চার বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। গণতান্ত্রিক মোর্চা এথবা গণবিপ্লবী পার্টি সম্পর্কে আমাদের সামগ্রিক ধারণা উদ্ভূত হয়েছে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মূল নীতিমালা থেকে, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে নির্দিষ্ট ভারতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে তার একাত্মকরণের মধ্য থেকে, তার কর্মসূচি উদ্ভূত হয়েছে সমাজতন্ত্রের দিকে এক উত্তরণশীল পর্যায় হিসাবে এক বিপ্লবী গণতান্ত্রিক প্রেক্ষিত থেকে এবং তার নেতৃত্বকারী কেন্দ্র গঠিত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিয়েই। গত কয়েক বছরে ঐ ধরনের এক মোর্চা গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা কিছু মাত্রায় সাফল্য পেয়েছি। বিশেষত বিহারে ঐ মোর্চা অন্যান্য দলের কর্মীবাহিনীর মধ্যে থেকে বামপন্থী ও গণতন্ত্রীদের আকৃষ্ট করে চলেছে। বিভিন্ন রূপের সংগ্রামের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতেও আমরা কিছুদূর সফল হয়েছি, যার মধ্যে রয়েছে সংসদীয় সংগ্রামের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট অগ্রগতি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি পার্টির মধ্য থেকেই এক অদ্ভুত তত্ত্ব উঠে আসছে, যে তত্ত্ব সাম্প্রতিক পূর্ব ইউরোপের ঘটনাবলীর বিকাশ থেকে প্রেরণা পেয়েছে। এই তত্ত্ব বলছে যে পার্টিকে বিলোপ করে দিতে হবে, ঘুরিয়ে বলা হচ্ছে ‘আইপিএফ-এর রূপে পার্টি খোলা হয়ে সামনে আসছে’। তাঁরা ধারাবাহিকভাবে বলে যাচ্ছেন যে, কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রতিস্থাপিত করতে হবে গণতান্ত্রিক পার্টিকে দিয়ে, অথবা যাকে কেউ কেউ বলতে পছন্দ করেন ‘বাম গঠন’। পার্টি সুনির্দিষ্ট সাফল্যলাভ করার পরও, এক গণতান্ত্রিক মোর্চা বা বলা যায় এক গণতান্ত্রিক পার্টিকে বিকশিত করার ব্যাপারে সাফল্যলাভের পরও হঠাৎ করে পার্টির বিরুদ্ধে এই বিস্ফোরণ কেন? এর কারণ অনুসন্ধান খুব কষ্টসাধ্য নয়। আমাদের সহযাত্রীরা যে ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ বা ‘বাম গঠনের’ ধারণা করেছেন তা মূলগতভাবে এক উদারনৈতিক বুর্জোয়া কর্মসূচি অনুসরণ করে আর এই পরিকল্পনার সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি খাপ খায় না, কেননা কমিউনিস্ট পার্টি সব সময়েই এক বিপ্লবী গণতান্ত্রিক দিশা প্রদানের চেষ্টা চালায়। এক উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক পার্টির প্রয়োজনের যথার্থতা প্রতিপন্ন করতে এই তত্ত্ব বিপরীত অভিমুখেই যাত্রা করে। প্রথমত সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে লঘু করে ফেলা হয়। আর ঐ সমস্ত উদারনৈতিকদের গুরু হলেন গর্বাচভ, যাঁর সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে উপদেশাবলী, রাষ্ট, জাতি ও মহাদেশগুলির পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসা সম্পর্কিত হিতোপদেশগুলিকে সমালোচনা ছাড়াই গ্রহণ করা হয়। অন্য শত্রু সামন্ততন্ত্র সম্পর্কে বলা হয় যে, সামন্ত অবশেষগুলিকে এক বুর্জোয়া সরকার মারফত আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে ধাপে ধাপে নির্মূল করা যেতে পারে। বিপ্লবীদের শুধু এই ধরনের সরকারে যোগ দেওয়া প্রয়োজন, অথবা খুব বেশি হলে এই সরকারের উপর কিছু জনপ্রিয় চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

সমগ্র ৯০ দশক জুড়েই আমাদের রণনীতিগত কর্তব্যকর্ম থাকছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মহান লাল পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা, সিপিআই(এমএল)-কে শক্তিশালী করা এবং গণতান্ত্রিক মোর্চার সম্প্রসারণ করে চলা।