(জানুয়ারি ১৯৮৮, চতুর্থ পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট থেকে)

১৯৮৭-র ৮ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট রেগন ও সাধারণ সম্পাদক গর্বাচভ ওয়াশিংটনে একটা চুক্তিতে সই করেছেন যার লক্ষ্য হচ্ছে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার আণবিক অস্ত্রের গোটা ধরনটারই বিলোপসাধন করা। এজন্য বিশ্ব জনগণের মধ্যে যে আনন্দের সঞ্চার হয়েছে আমরাও তার অংশীদার। এই চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। আণবিক অস্ত্রের যতটুকু (মাত্র ৪ শতাংশ) বিলোপ ঘটাতে চাওয়া হয়েছে, সেদিক থেকে এই চুক্তি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে না, তবুও এটা একটা শুভ সূচনার ইঙ্গিত বহন করছে। আমেরিকার অর্থনৈতিক সংকট ও রাশিয়ার অর্থনীতিকে পুনর্বিন্যাস (rationalisation) করার একান্ত প্রয়োজনীয়তা, আণবিক প্রযুক্তির ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য ঘনিয়ে আসা বিপদ যা আমেরিকার আণবিক কারখানাগুলিতে কয়েকটা লিক তথা চেরনোবিলের কুখ্যাত দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে পরিলক্ষিত হয়, পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকায় শান্তি আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান তীব্রতা এবং অবশ্যই মিখাইল গর্বাচভের চালু করা শান্তি অভিযান প্রভৃতি নানান কারণের সম্মিলিত প্রভাবেই এটা সম্ভব হয়েছে।

সতর্কবাণী হিসাবে আমাদের অবশ্যই এখানে এটা পুনরায় উল্লেখ করতে হবে যে নভেম্বর ভাষণে গর্বাচভ শান্তি আন্দোলনের বুনিয়াদ হিসাবে যা হাজির করেছেন তাতে সাম্রাজ্যবাদকে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। সেই ভাষণে, তিনি এমনই এক সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার কল্পনা করেছেন যে ব্যবস্থায় যুদ্ধের বিপদ আর থাকবে না, যা অর্থনীতিকে আর সমরমুখী করে তুলবে না, যেখানে নয়া উপনিবেশিক শোষণ আর থাকবে না। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নাকি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবেই প্রতিযোগিতা করবে। সাম্রাজ্যবাদের এহেন ছবি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। নয়া ঔপনিবেশিক শোষণ ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বের জনগণের সংগ্রাম, ইউরোপ ও আমেরিকার জনগণের শান্তি আন্দোলন, নিজ নিজ দেশের অর্থনীতির সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম, এবং শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ চূড়ান্তভাবে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার ধ্বংসের শর্ত সৃষ্টি করবে এবং এর ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গেই কেবল যুদ্ধের বিপদ চিরকালের জন্য দূর হতে পারে।