(ষষ্ঠ পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট থেকে)

আমাদের দেশে মুসলিম প্রশ্ন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা যে ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হন তা এক বিশেষ ধরনের সংখ্যালঘুগত পরিবেশের জন্ম দেয়, আর হিন্দুত্বের শক্তিগুলির উত্থান এটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এই পরিবেশ ঐ সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াকে এক নির্দিষ্ট রূপ দেয় – তাঁরা নিজেদের সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতি বলে ভাবতে শুরু করেন। কেবল সাম্প্রদায়িকতার একক সীমাতেই তাঁদের প্রতিক্রিয়া নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তাঁরা গণতান্ত্রিক সংস্কার, দুর্নীতির বিরোধিতা, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের বিরোধিতা ইত্যাদি ইস্যুতে আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন। এর ফলে নেতৃত্ব মৌলবাদী শক্তি ও ‘গুণ্ডাদের’ কব্জায় চলে যায়।

মুসলিম জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আন্তঃক্রিয়ার বিকাশ ঘটানো এবং তাদের সুনির্দিষ্ট সমস্যাগুলিকে উপলব্ধি করার বিষয়টি আমাদের এক বড় দুর্বলতা হিসাবে থেকেছে। বিহারে আমরা যে ইনকিলাবী মুসলিম কনফারেন্স গড়ে তুলেছি তা আমাদের মুসলিম জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের বিকাশ ঘটানো, তাদের সমস্যা উপলব্ধি করা এবং আমাদের সাড়াকে সূত্রবদ্ধ করার ব্যাপারে পার্টিকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এটা ঠিক যে সংগঠনটি নিজে খুব একটা অগ্রসর হতে পারেনি এবং মহিলা প্রশ্ন, দলিত মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের প্রশ্ন ইত্যাদি নিয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিতর্কে হস্তক্ষেপ করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছে। তবু মুসলিম জনগণের মধ্যে পার্টির কাজে গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। উর্দুতে প্রচার, মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আন্তঃক্রিয়া এবং পার্টি নেতৃত্বের দ্বারা বিশেষ সম্মেলন বা জনসভায় ভাষণ দেওয়া এ সবকিছুই উৎসাহিত হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এগুলি এখনও যথেষ্ট অপ্রতুল।

আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে বিহারে অনেক জায়গাতেই সিপিআই(এমএল) মুসলিম জনগণের মধ্যে ভালো সাড়া পাচ্ছে এবং ‘লালুর পরে কে’, এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায়শই সিপিআই(এমএল)-এর নাম উল্লেখ হচ্ছে। লক্ষ্ণৌ থেকে পরিচালিত সারা ভারত মুসলিম ফোরাম এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লীগের বিহার শাখার সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠ মৈত্রী সম্পর্কের বিকাশ ঘটিয়েছি। জেএনইউ এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে এআইএসএ যে সাড়া পেয়েছে এবং শহীদ চন্দ্রশেখরের পক্ষে ও তার হত্যাকারী সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে তাঁরা যেরকম দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন, তা যথেষ্ট উৎসাহব্যাঞ্জক। এটা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, মুসলিম ছাত্র ও যুবকরা মুসলিম রাজনীতির পুরোনো ধারাকে ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত এবং তাঁরা বাম শক্তিগুলির নিকটতর হচ্ছেন।

লালু-মুলায়ম আর মুসলিম সমাজের প্রশ্নাতীত নায়ক নন। ঐ সমাজ পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এবং তরুণ ছাত্ররা সেই প্রেরণার প্রতিনিধি। তাঁদের আরও বেশি করে পার্টির ধারায় নিয়ে আসা এক জরুরি কর্তব্য।