(৭০ দশকের গণহত্যার তদন্তের দাবিতে, ২৭ নভেম্বর ১৯৯৮, কলকাতার নাগরিক কনভেনশনে ভাষণ)

সত্তর দশকের হত্যাকাণ্ডগুলি নিয়ে তদন্তের শ্বেতপত্র প্রকাশের; চারু মজুমদার, সরোজ দত্তের হত্যার তদন্তের দাবি উঠেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব নকশালপন্থী শহীদদের ব্যবহার করতে কখনই পিছপা হয়নি। নতুন যে বিষয়টি আমরা দেখছি তা হল – এই প্রথম কোনো কংগ্রেসী নেতা, তাও আবার সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, নিজেই বলেছেন যে নকশালপন্থীদের কংগ্রেস হত্যা করেনি, হত্যা করেছে সিপিআই(এম)। তাহলে প্রশ্ন হল হত্যা কে করেছে। সিপিআই(এম) বলছে কংগ্রেস করেছে, কংগ্রেস বলছে সিপিআই(এম) করেছে। ইতিহাস বলছে এই হত্যাকাণ্ড কংগ্রেস করেছে, সিপিআই(এম)ও করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে উভয়ে মিলে করেছে। সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস তাদের মধ্যকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমাদের শহীদদের দাবার গুটি হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। এটা একটা বড় চক্রান্ত। আমাদের শহীদদের, বিপ্লবী বামপন্থী আন্দোলনের শহীদদের হাতিয়ার করার অধিকার আমরা কংগ্রেস বা সিপিআই(এম)-কে দিতে পারি না। সেই অর্থে সমস্ত বিপ্লবী বামপন্থী কর্মী, তাঁরা যে সংগঠনেই থাকুন না কেন, তাঁদের কর্তব্য সেই সময় বাস্তবিকই কী ঘটেছিল সেই সত্যটাকে সামনে আনার। বিভিন্ন রাজ্যে যে বামপন্থী সরকারগুলি আছে, যাঁরা নিজেদের সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক হিসাবে, নাগরিক অধিকার-রক্ষক হিসাবে দাবি করেন, সে পশ্চিমবাংলায় হোক বা কেরালায় হোক, তাঁরা কোনো তদন্ত করতে রাজি হচ্ছেন না। তাঁরা নিজেরা যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেটা উন্মোচিত হওয়ার ভয় থেকে, নাকি আরও কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এর মধ্যে জড়িত আছে, তা আমাদের জানা নেই। যাই হোক, দাবি তাঁরা সহজে মানবেন না। কাজেই আন্দোলন হবে দীর্ঘস্থায়ী। তাঁরা এই যুক্তি আনবেন – বিষয়টি ২৮ বছরের পুরোনো। কিন্তু বিদেশে কোনো মিলিটারী অফিসার যখন ঘোষণা করেন যে, তিনি চে গুয়েভারাকে হত্যা করেছেন, সেটা নিয়ে সিপিআই(এম) খুব হৈ চৈ করে। তখন তাদের কাছে এটা মনে হয় না যে, বিষয়টি ২৮ বা ৩০ বছরের পুরোনো।

১৯৭০ দশকে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা আগামীদিনে বিশাল বিদ্রোহের রিহার্শাল মাত্র ছিল। সে আন্দোলন আজও দেশের বিভিন্ন অংশে অব্যাহত আছে। আগামীদিনে আবার ঐ হত্যাকাণ্ডগুলির পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, বা ঘটলেও তার বিরুদ্ধে যাতে একটা প্রতিবাদ সংগঠিত করা যায়, তার জন্য প্রয়োজন আজকের এই তদন্তের। এই দাবি যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে এবং আশা করা যায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার মধ্যে আরও অনেক গণতান্ত্রিক মানুষকে সামিল করা হবে।