(লিবারেশন, সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ থেকে, সংক্ষেপিত)

সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রেসী-র ১৫ আগস্ট সংখ্যায় রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান প্রসঙ্গে আমাদের পর্যালোচনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আমাদের পার্টির বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। অন্যান্য পার্টি-মুখপত্রেও নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে, আর পাঞ্জাবে – যেখানে তাদের পার্টির কোনো নিজস্ব মুখপত্র নেই, ‘পাঞ্জাবী ট্রিবিউন’-এ লেখাটিকে চালান করে দেওয়া হয়েছে। পিপলস ডেমোক্রেসী সংযুক্ত মঞ্চগুলি সম্পর্কে ‘নকশালপন্থীদের’ মুর্খতাপূর্ণ সংকীর্ণ ও বালখিল্য আচরণ সম্পর্কে বিলাপ করেছে। লেখা শেষ করা হয়েছে আমাদের এই হুঁশিয়ারী দিয়ে যে “মূলস্রোতে থাকবেন নাকি পুরোনো প্রান্তীয় রাজনীতিতে ফিরে যাবেন – সিদ্ধান্ত নিন”।

তাদের যুক্তিগুলিকে একটি একটি করে ধরা যাক। রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান থেকে আমাদের নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের মূল কারণ ছিল পরিস্থিতির নির্দিষ্ট পরিবর্তন, যেক্ষেত্রে মূল জোর ঘুরিয়ে দেওয়া উচিত কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে। পিপলস ডেমোক্রেসী নিজেও স্বীকার করেছে যে “রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর মতো মঞ্চগুলি নির্দিষ্ট পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী মাঝে মাঝেই গড়ে উঠবে”। সম্পূর্ণ সঠিক। এখন, নির্দিষ্ট পরিস্থিতি কি সত্যিই পরিবর্তিত হয়নি? যে সিপিআই(এম) এতদিন বিজেপির সাপেক্ষে কংগ্রেস সরকারকে সংসদের অভ্যন্তরে বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিল সে-ই, যদিও অনিচ্ছায়, অনাস্থা প্রস্তাব আনতে মুখ্য উদ্যোগী হতে বাধ্য হয়েছে এবং বিজেপির সঙ্গে একসাথে ভোট দিয়েছে! ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে “যখন মূল জোর থাকা উচিত ছিল সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে” (বাঁকা হরফ আমাদের), তখন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ক্ষেত্রে সিপিআই(এম)-এর অস্বীকৃতির সমর্থনে লিখতে গিয়েও পিপলস ডেমোক্রেসী  অসতর্কভাবে কবুল করে ফেলেছে যে অগ্রাধিকারের বিষয় এখন বদলে গেছে। পিপলস ডেমোক্রেসী -র যুক্তি হল, “নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করার মাধ্যমে সরকারের সাথে সংঘর্ষে যাওয়ার উপর জোর দিলে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সমাবেশ ঘটানোর যে লক্ষ্য তা পথভ্রষ্ট হতে পারত।” এ হল একজন উদারনৈতিকের যুক্তি, মার্কসবাদীর নয়। তথাপি, একথার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এখানেই যে তাদের স্ব-আরোপিত সীমারেখা আর মোটেই কাজ দিচ্ছে না। ১৯ আগস্ট ও ৯ সেপ্টেম্বরের কর্মসূচিগুলি এ সত্যকেই যথেষ্টভাবে উদ্ঘাটিত করেছে। পিপলস ডেমোক্রেসী -র শ্রীযুক্ত রাজনৈতিক ভাষ্যকারকে জিজ্ঞাসা করি, মূল জোর দেওয়ার ক্ষেত্র বর্তমানে বদলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর জন্য কোনো ভূমিকা রাখার কথা আপনারা বিবেচনা করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে পিপলস ডেমোক্রেসী  নিরুত্তর আর তাই সমগ্র বিতর্কটি এক অর্থহীন কুৎসা অভিযানে পর্যবসিত হয়েছে। নিউ এজ (সিপিআই-এর মুখপত্র) প্রশ্নটির জবাব দিতে চেষ্টা করেছে যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর ঠিক কী ভূমিকা হবে তা নির্দিষ্ট করতে পারেনি। আইপিএফ এক বিকল্প পরামর্শ দিয়ে বলেছে, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বরা রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর পরিচালনায় থাকুন আর রাজনৈতিক দলগুলি পিছন থেকে সাহায্য করুক। এ প্রশ্নে স্বাস্থ্যকর বিতর্ক চলতে পারত। কিন্তু পিপলস ডেমোক্রেসী অতি উচ্ছ্বাসের বশবর্তী হয়ে এবং আমাদের এক হাত নেওয়ার জন্য মূল বিষয় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। যারা প্রায় ভীমরতির সীমানায় পৌঁছে গেছে তাদের এই শিশুসুলভ আচরণের জন্য করুণা হয়।

সংযুক্ত মঞ্চগুলির ভিতরে কাজ করার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর ভূমিকাকে পর্যালোচনা করতে গিয়ে পিপলস ডেমোক্রেসী ‘বিস্তৃত পরিসরের’ শক্তিগুলি ও বামপন্থীদের নিজস্ব মঞ্চসমূহের মধ্যে চীনের প্রাচীর খাড়া করার চেষ্টা করেছে। এসব হল নিতান্তই উদারনৈতিক বুর্জোয়া আবর্জনা। বিস্তৃত পরিসর তাহলে উদারনৈতিক বুর্জোয়া ধ্যান-ধারণা প্রচারের, বুর্জোয়া দলগুলির মাহাত্ম্য প্রচারের এক সংযুক্ত মঞ্চ! তাহলে বামদের অস্তিত্বের পিছনে যুক্তি কী থাকে? কেবল জনসাধারণকে সমাবেশিত করা আর বুর্জোয়া ভাঁড়দের নাটুকেপনায় তাদের করতালি দিতে আদেশ দেওয়া? আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রকৃত কোনো সংগ্রামে গণউদ্যোগকে উন্মুক্ত করা ও বাম মতাদর্শের প্রসার ঘটানোই অগ্নিপরীক্ষার বিষয় এবং বামদের অবশ্যই একটি সংযুক্ত মঞ্চকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাতে হবে।

উত্তরপ্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্বাচনে এআইএসএ-র জয় কেবল মাত্র আমাদেরই সাফল্য নয় বরং সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শক্তিরই জয় এবং এভাবেই দেশজুড়ে সমগ্র ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি স্বীকৃতি জানিয়েছে। এ এক এমনই পরিহাসের ব্যাপার যে সাম্প্রদায়িকতাবাদ বিরোধী একটি জাতীয় মঞ্চ উত্তরপ্রদেশের এই তাৎপর্যপূর্ণ বিকাশকে উপেক্ষা করাই শ্রেয় মনে করেছে এবং ১৪ এপ্রিলের সমাবেশে এআইএসএ-র কোনো বক্তাকে বক্তব্য রাখার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে। “অন্যদের তুলনায় তাদের (আইপিএফ-এর) সীমিত শক্তি সত্ত্বেও তারা অন্যান্য প্রায় সকল দলের থেকে বেশি বক্তা আশা করে” – একথা বলে তারা যে যুক্তির অবতারণা করেছে তার উদ্দেশ্য হল সংশ্লিষ্ট মূল বিষয় থেকে তুচ্ছ কোনো দিকে দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। বেশি বক্তা পাওয়ার মতো সামান্য বিষয় নিয়ে দরকষাকষি করা অথবা ক্যামেরার সামনে আসার মতো অভ্যাস আমাদের নেই – এসব আপনাদেরই একান্ত সংরক্ষিত। উত্তরপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্বাচনে সাফল্যের মতো বিরাট তাৎপর্যময় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত কেবলমাত্র ওই একবারই আমরা এআইএসএ-র একজন বক্তা দাবি করেছিলাম। আমরা মঞ্চকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছিলাম – এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং উপদেশ দেওয়া হয়েছে যাতে আমরা আমাদের সাফল্যগুলি সম্পর্কে আমাদের নিজেদের মঞ্চের মাধ্যমেই প্রচার চালাই। চমৎকার! তাহলে একই যুক্তিতে, রাম বিলাস পাশোয়ানের কি নিজস্ব মঞ্চ নেই? তাঁকে কি মঞ্চটিকে আম্বেদকর শতবর্ষ উদযাপনের এক আস্ত প্রদর্শনী হিসেবে রূপান্তরিত করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি, মঞ্চটিকে দখলের সচেতনভাবে সুযোগ করে দেওয়া হয়নি? লালুরও নিজস্ব মঞ্চ আছে। সেদিনের সমাবেশের বিচারে তাঁর তো লোক জমায়েতের নিজস্ব কোনো কৃতিত্ব ছিল না। তাহলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর সমাবেশের মূল মর্মবস্তুকে বিসর্জন দিয়ে নিজের ভাবমূর্তি খাড়া করার জন্য মঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হল কেন? কমরেড সুরজিৎ বিহারে লালুর বাইরে কিছু দেখতে সক্ষম না হতে পারেন কিন্তু আমরা অবশ্যই এ সত্যকে স্বীকার করি যে বিহার যদি আপেক্ষিকভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে মুক্ত থাকে সেক্ষেত্রে বিহারের জনগণ ও বাম শক্তিগুলির রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিহারে দরিদ্র কৃষক জনগণের ভূমিকা ও উত্তরপ্রদেশের ছাত্রদের উপর গুরুত্ব আরোপ করা কীভাবে যে ‘বিস্তৃত পরিসরের’ অথবা রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর ঘোষণার বিরুদ্ধাচরণ হয় – তা আমাদের বোধগম্য নয়।

বিষযবস্তুটির জটিলতা রয়েছে অন্য কোথাও। উত্তরপ্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্বাচনে এআইএসএ-র বিজয়কে সিপিআই(এম) কখনই হজম করতে পারেনি এবং সিপিআই(এম)-এর মুখপত্রগুলিতে এই খবর কাটছাঁট করে প্রকাশ করার যে হাস্যকর প্রয়াস চালানো হয়েছে তা দেখিয়ে দেয় যে এই খবরে বিজেপির থেকেও সিপিআই(এম) বেশি মর্মাহত। এর পরেও তাঁরা আমাদের এ প্রশ্নে সংকীর্ণতাবাদী বলার ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেন।

এটি সাধারণ বোধের ব্যাপার যে রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর প্রধান জোর ছিল সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে। কিন্তু তা অকারণে কেবলমাত্র অ-কংগ্রেসী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির এক মঞ্চ হিসেবে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেনি। সিপিআই(এম) কংগ্রেসকে এই মঞ্চের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তাব রেখেছিল কিন্তু তাদের এই ইচ্ছা মঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ শরিকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। মার্চ ও এপ্রিল মাস ছিল সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রচারাভিযানের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সিপিআই(এম) “সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে সমাবেশ ঘটানোর লক্ষ্য” বিপথে চলে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে নিজে সমাবেশ থেকে দূরে থেকে যায়। বিজেপি-কে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে তাঁরা প্রকৃতপক্ষে কংগ্রেসের উপর বিরাট আশা পোষণ করছিলেন এবং সে জন্য তাঁরা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশগুলির উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞাও স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছিলেন। এটি একেবারেই মিথ্যা দাবি যে “বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছিল এবং সম্ভবত আইপিএফ ছাড়া সকল শক্তিই একমত হয়।” জনতা দল এবং সিপিআই, শেষ সময় পর্যন্ত, রাষ্ট্রীয় একতা অভিযান-এর বারাণসী সমাবেশে অংশগ্রহণে যথেষ্ট ইচ্ছুক ছিল এবং একমাত্র শেষ মুহূর্তে সিপিআই(এম) চক্রান্ত করে তাদের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

পিপলস ডেমোক্রেসী আমাদের এই তথ্যও দিচ্ছে যে, “তারা {অর্থাৎ সিপিআই(এমএল) ও আইপিএফ} গণসংগঠনগুলির কনভেনশনে সাধারণ সনদের বাইরের ইস্যুগুলি ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল এবং প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।” কমরেডগণ, আমাদের কাছে সত্যি এটা একটা খবর বটে। আমাদের গণসংগঠনগুলির বক্তারা অংশগ্রহণকারী মানুষদের কাছ থেকে ভালোমাত্রায় সোচ্চার সমর্থন পেয়েছিলেন আর কেবলমাত্র আপনাদের পার্টির লোকেরাই – যারা সেখানে সভাপতিত্ব করছিলেন – সমস্ত গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে আমাদের বক্তাদের জন্য বরাদ্দ সময় কাটছাঁট করার চেষ্টা করতে থাকেন।

আমাদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য সংগ্রাম গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ মাত্র। আমরা যদি সত্যিসত্যিই সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামের প্রশ্নে নিষ্ঠাবান হই, ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রন্টের শরিকরাও তাহলে তাদের পারস্পরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিয়ম উদ্ভাবনে নৈতিকভাবে বাধ্য। যদি একই সময়ে লালু যাদব আইপিএফ বিধায়কদের নিয়ে ঘোড়া কেনা-বেচার কাজে লিপ্ত থাকেন আর আপনারা আইপিএফ-এর সঙ্গে যুক্ত কৃষিমজুরদের গণহত্যা সংগঠিত করেন, তাহলে তা মানুষের কাছে কী বার্তা নিয়ে যাবে? আপনারা ভুল করছেন কমরেড। আমাদের বিধায়ক দলে “ভাঙন ঘটানো”র জন্য আমরা লালু যাদবের উপর ক্ষিপ্ত নই। কারোর মত বদলের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে এবং অবশ্যই তিনি নিজের পছন্দমতো দলে যোগ দিতে পারেন। আমরা কেবলমাত্র দাবি করছি যে মৌলিক সংসদীয় নৈতিকতার স্বার্থে ওই বিধায়কদের ইস্তফা দিতে বলা উচিত এবং তাদের নতুন করে জনগণের রায় নেওয়া উচিত। এটা সম্পূর্ণতই এক গণতান্ত্রিক দাবি আর নেহাত কিছু প্রয়োজনবাদী রাজনৈতিক লাভের আশায় লালুর গণতন্ত্র বিরোধী আচরণকে যুক্তিযুক্ত বলে দেখাতে গিয়ে আপনারা খুবই খারাপ নজির স্থাপন করছেন। ভালো কথা, বিধায়কদের রাজনৈতিক উৎকর্ষকে নিশ্চিত করা ও শিক্ষিত করে তোলার জন্য আপনাদের মূল্যবান উপদেশের জন্য আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা আরও উপকৃত হতাম যদি সাট্টা ডন রশিদ খানের সাথে আপনাদের কোনো কোনো এমএলএ-র আঁতাত ও কলকাতায় কয়েকজন সন্দেহভাজন শিল্পপতির সাথে আপনাদের কিছু মন্ত্রীর যোগসাজশের ব্যাপার আপনারা কীভাবে সামলাচ্ছেন সেই অভিজ্ঞতার কথা যদি আমাদের বিবৃত করতেন। যাই হোক, আমরা প্রকাশ কারাত কথিত সর্বোত্তম বাম সংগঠন বামফ্রন্টের সাতজন এমএলএ-র রাজ্যসভায় প্রণব মুখার্জীর পক্ষে ভোট দেওয়ার মতো অস্বস্তিকর প্রশ্ন উত্থাপন করা থেকে বিরত রয়েছি। যে পার্টি নিজেকে ভারতে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি বলে দাবি করে তাদের কি ‘চোরেদের মন্ত্রীসভার’ থেকে ভালো কিছু সরকার উপহার দেওয়া উচিত নয়? শব্দগুলি ব্যবহারের জন্য, কমরেডগণ, আমরা দুঃখিত, কিন্তু সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হুবহু এই শব্দগুলিই ব্যবহার করেছিলেন।

পিপলস ডেমোক্রেসী-র অভিমত অনুযায়ী, “সিপিআই(এম)-কে তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু বানানো চারু মজুমদারের পুরোনো তত্ত্বেরই ছায়া ছাড়া আর কিছুই নয়” এবং “এই গ্রুপ সম্প্রতি যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে তার ফলে মনে হয় পুরোনো ধ্বংসাত্মক অবস্থানের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায়”। দুটি হিসেবের ক্ষেত্রেই পিপলস ডেমোক্রেসী গোলমাল করে ফেলেছে। কোনো ধাক্কা নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যত্র সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আমাদের পার্টির বিস্তার ঘটার ফলেই আমাদের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)-এর রোষের সঞ্চার হয়েছে। তৃণমূলে এর প্রতিফলন ঘটেছে করন্দা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে (পিপলস ডেমোক্রেসী-র আর কীসের সমস্যা! তাদের পার্টির কাছে যা কিছু অস্বস্তিকর তাকে চেপে যাওয়ার তাদের সনাতন ঐতিহ্য অনুযায়ীই তারা করন্দা প্রসঙ্গে কোনো কিছু উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছেন) আর বৃহত্তর ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটছে প্রধান ধারার রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুরোদস্তুর এক কুৎসা অভিযান চালানোর মধ্যে। উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন, আইপিএফ-এর সাথে জনতা দলের যৌথ কার্যকলাপ চালানো নিয়ে আলাপ-আলোচনার বিরোধিতা করে এবং সিপিআই(এম)-এর শক্তি ভেঙ্গে আইপিএফ অগ্রগতির পরিকল্পনা করছে – এই অভিযোগ এনেছেন। সিপিআই(এম)-এর প্রতি সহানুভূতিশীল এমন লোকজন সমেত সমস্ত বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই অস্বাভাবিক বিবৃতির নিন্দা করেছেন এবং সিপিআই-এর রাজ্য পরিষদ এর নিন্দা করে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। বস্তুতপক্ষে বামফ্রন্টের উপর সিপিআই(এম)-এর কর্তৃত্ব শিথিল হয়ে পড়া আর বিপরীতে এমনকি পশ্চিমবঙ্গে পর্যন্ত বামফ্রন্টের শরিকদের সাথে আমাদের আন্তঃক্রিয়ার বৃদ্ধিই সিপিআই(এম)-কে আতঙ্কগ্রস্ত ও আমাদের প্রতি অতিরিক্ত ক্ষিপ্ত করে তুলেছে।

সিপিআই(এম) যদি সমগ্র বাম-মধ্যপন্থী বৃত্তে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক-মতাদর্শগত প্রতিপক্ষ হয়ে থাকে তার কারণ কিন্তু চারু মজুমদারের কিছু তত্ত্ব অথবা আমাদের পছন্দ-অপছন্দ নয়। এর মূল নিহিত আছে আমাদের পারস্পরিক ইতিহাসের মধ্যে, আমাদের দুই বিপরীত রাজনৈতিক-কৌশলগত লাইনের ভিতরে এবং আমাদের বিচ্ছিন্ন করার, চরিত্র হননের, এমনকি শারীরিকভাবে শেষ করে দেওয়ার আপনাদের উন্মত্ত প্রচেষ্টার মধ্যে। প্রান্তিক রাজনীতিতে পড়ে থাকার আমাদের কোনো ইচ্ছা নেই আর মূলস্রোত থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করার আপনাদেরও কোনো সাধ্য নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সিপিআই(এম)-এর মধ্যে বিবেকের কণ্ঠস্বরগুলি আছে যারা বামদের স্বাধীন ভূমিকার এক নতুন ভিত্তিতে আমাদের দুই পার্টির মধ্যে কমরেডসুলভ সহযোগিতার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন; এবং ভবিষ্যতে এইসব লাইনগুলির কোনো পুনর্বিন্যাস ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে নিশ্চিতভাবেই নতুন এক অধ্যায় খুলে দেবে। হাজার হোক, কোনো নেতার আত্মগত বাসনার চেয়েও পরিস্থিতির ক্ষমতা অনেক বেশি।